শবর, টোটো, মুন্ডা, তামাং, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং—বাঙালি ছাড়াও অসংখ্য ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে। পৃথক পৃথক ভাষা এবং সংস্কৃতি রয়েছে তাঁদেরও। তবে কোনোভাবেই সেসব ভাষাকে বাংলার উপভাষা বলা চলে না। প্রতিটি ভাষাই স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন। দেখতে গেলে, বাংলারই ‘আগ্রাসন’-এর শিকার এই সমস্ত আঞ্চলিক ভাষাগুলি। এবার বিপন্নপ্রায় আঞ্চলিক ভাষাদের সংরক্ষণ করতে বিশেষ উদ্যোগ নিল বাংলাদেশ (Bangladesh)। প্রকাশ করল ৭টি প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ভাষার শব্দকোষ (Dictionary)।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবমিলিয়ে প্রায় ৫০টি প্রাচীন জনগোষ্ঠীর বসবাস। তবে বেসরকারি হিসাবে সংখ্যাটা আরও বেশি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে পঞ্চাশেরও বেশি আঞ্চলিক ভাষা। তবে শিক্ষা কিংবা প্রশাসনিক কাজ— কোনোক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় না এইসকল ভাষাগুলি। ২০০২ সাল থেকে বাংলাদেশের ৩০টি আঞ্চলিক ভাষার ওপর বিশেষ জরিপ চালিয়েছিল আন্তর্জাতিক সংগঠন সামার ইনস্টিটিউট অফ লিঙ্গুইস্টিকস। সেই সমীক্ষার উঠে আসে, বাংলাদেশের ৩০টি আঞ্চলিক ভাষাই বিপন্নপ্রায় ভাষার তালিকাভুক্ত। কেবলমাত্র সেগুলি ব্যবহৃত হয় কথ্য ভাষা হিসাবে। প্রবীণরা ভাষার ব্যাকরণ জানলেও, তরুণ প্রজন্ম সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানে না এইসকল ভাষাগুলি। এমনকি তাঁদের শব্দভাণ্ডারও রীতিমতো সীমিত।
এই রিপোর্ট প্রকাশের পরেই ২০১৭ সালে আঞ্চলিক মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো এবং সাদরি— এই পাঁচটি জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল মাতৃভাষা। ভাষা সংরক্ষণের পরবর্তী ধাপে এবার প্রকাশিত হল ৭টি আঞ্চলিক ভাষার শব্দকোষ। যার মধ্যে রয়েছে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, খিয়াং, পাংখোয়া এবং লুসাই ভাষা। প্রতিটি ভাষাই প্রচলিত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য অঞ্চলে।
বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের একাধিক জনগোষ্ঠী এলাকায় পৃথক পৃথক রীতি মেনে উদযাপিত হচ্ছে নববর্ষের উৎসব। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জনজাতিগোষ্ঠীর উৎসবের মরশুমেই সম্প্রতি মোড়ক উন্মোচন করা হয় সদ্য-প্রকাশিত শব্দকোষগুলির। তাছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রকাশিত হয় একাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ গ্রন্থ। এককথায় বাংলাদেশের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। শিক্ষণীয়ও বটে। আগামীদিনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এই মডেলই দিশা দেখাতে পারে ভারত কিংবা পশ্চিমবঙ্গে…
আরও পড়ুন
শিক্ষার জন্য অসম লড়াই, একাধিক পাঠাগার তৈরি করে নজির বাংলাদেশের যুবকের
Powered by Froala Editor