দৃশ্যটা বাংলার আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের মতোই। কাঁচারাস্তার দুধারে একের পর এক মাটির বাড়ির সারি। আপাতভাবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু অবাক লাগার মতো বিষয় হল, সরকারের পক্ষ থেকে যখন গ্রামবাসীদের পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কথা বলা হল, তখন একসঙ্গে আপত্তি জানালেন গ্রামের সবাই। হ্যাঁ, সত্যি সত্যি এমনটাই ঘটেছে বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার দেশিগ্রামে। অভাব বা সামর্থ্যহীনতা থেকে নয়, বরং গর্বের সঙ্গে নিজেদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতেই মাটির বাড়িতে বাস করেন গ্রামের ৫০টি পরিবার।
নামের সঙ্গে মিল রেখেই যেন গ্রামীন সংস্কৃতির জীবন্ত জাদুঘর হয়ে উঠেছে দেশিগ্রাম। রাস্তা কাঁচা, প্রতিটা বাড়ি মাটির। অথচ পাকা বাড়ি তৈরির মতো আর্থিক সঙ্গতি কি নেই কারোরই? বিষয়টা একেবারেই তেমন নয়। বরং গ্রামবাসীদের দাবি, মাটির বাড়িতে বাস করার যে আরাম তা পাকা বাড়িতে পাওয়া যায় না। গ্রীষ্মের তাপে যখন সব জায়গায় মানুষের নাভিঃশ্বাস ওঠে, তখন দেশিগ্রামের মানুষ নিজেদের মাটির বাড়িতে আরামে বসবার করেন। মাটির মধ্যে ফাঁক দিয়ে বাতাস চলাচল করে। কখনোই খুব ঠান্ডা বা খুব গরমের মধ্যে পড়তে হয় না গ্রামবাসীদের।
অবশ্য সরকারের চোখে বিষয়টা খানিকটা অদ্ভুতই লেগেছিল। গ্রামীণ সহায়তা প্রকল্পে প্রত্যেকের জন্য করোগেটেড টিনের ছাদ দেওয়া পাকা বাড়ি মঞ্জুর করেছিল সরকার। কিন্তু সবাইকে অবাক করে সেই সাহায্য ফিরিয়ে দিয়েছে দেশিগ্রামের মানুষ। উন্নয়নের রথ যত এগিয়ে চলেছে, মানুষের প্রাপ্তি এবং হারানোর বস্তাও ফুলে উঠেছে সমানভাবে। আজ আর বাংলার নির্মল ‘মলয় সমীরণ’ চাইলেও পাওয়া যায় না। প্রকৃতিকে তো টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন প্রাকৃতিক পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখা। প্রকৃতির মধ্যে বসবাসের সেই চিরাচরিত প্রথাকেই আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন এখানকার গ্রামবাসীরা। সারা পৃথিবী যখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব টের পাচ্ছে, তখন তার প্রভাব যে এখানে একেবারে পড়েনি একথা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু গ্রামের নির্মল হাওয়া এখনও বেঁচে থাকার অক্সিজেন জোগান দিয়ে যাচ্ছে বুক ভরে।
তথ্যসূত্রঃ দ্য ডেইলি স্টার
Powered by Froala Editor