বিলুপ্তির পথে ৩০০-রও বেশি নদী, ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি

“আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়”

বাংলার প্রকৃতিকে ভালবেসে বারবার এখানেই ফিরতে চেয়েছেন কবি জীবনানন্দ দাশ। শুধু তিনি একাই নন, নদী-মাঠ-ক্ষেতের এই অপূর্ব রূপের বর্ণনা যুগে যুগে হয়ে এসেছে। আজও কি সেই একই চিত্র?

প্রশ্নটা করা তো হল, কিন্তু উত্তর তো সেই নৈসর্গিক ছবি দেখাতে পারছে না। বাংলাদেশের সুজলা সুফলা মাটির ওপর যে ধারা বয়ে যেত, আজ তা মুছে যেতে শুরু করেছে। হ্যাঁ, ক্রমশ বিপন্ন হচ্ছে ওপার বাংলার নদী। গত বছর, বাংলাদেশের জাহাজমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কার্যত স্বীকার করে নিয়েছিলেন এই কথা। তাঁর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ১৬,৪০০ কিমি দীর্ঘ জলপথ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। যা কিনা মোট জলপথের অর্ধেকেরও বেশি!

বর্তমান সমীক্ষা আরও ভয়াবহ চিত্রটা তুলে ধরেছে। একটা সময় বাংলাদেশে ছোট বড়ো মিলিয়ে প্রায় ৭০০টি নদী ছিল। আজ তা এসে দাঁড়িয়েছে ৪০৫-এ। তার মধ্যে ৫০টিরও বেশি নদী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যৌথভাবে আছে। যত দিন যাচ্ছে, এই নদীর সংখ্যা কমছে। তার ওপর রয়েছে দূষণ। অন্তুত ২৯টি নদীর দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে, এই নদীগুলোকে বায়োলজিকালি মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই জল ব্যবহার তো করাই যাবে না; কোনো প্রাণীও সেখানে থাকতে পারবে না। সেই সঙ্গে বীভৎস হারে কমছে ভূ-গর্ভস্থ জল। অন্যান্য নদী, জলাশয়ের অবস্থাও খুব একটা ভালো না। প্লাস্টিক, বর্জ্য এসব ফেলা তো রোজকার ব্যাপার।

নদী নিয়ে এমনিতেও ভাবনা চিন্তা করছে প্রশাসন। অবস্থা যাতে আর না খারাপ হয়, তার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন, আগে কেন কিছু করা হল না? এতগুলো নদী তো অকালে শেষ হয়ে যেত না! যত দিন যাচ্ছে, নদী-জলাশয়ের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ জলও শেষের পথে। এরকম চলতে থাকলে, শেষের সেই দিন আসতে আর খুব বেশি দেরি নেই। তবে দায়িত্ব কি শুধু প্রশাসনের একার? সাধারণ মানুষদেরও কি নেই? আমরা নিজেরা কবে সচেতন হব? খবর পড়ার পর আবারও ময়লা ফেলব জলে। আমরা ঠিক না হলে, আদৌ কি সমাধান আছে কোনো?

Latest News See More