গোটা দক্ষিণবঙ্গকে কার্যত তছনছ করে দিয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের রূপ বদলে খানিক নিম্নচাপের চেহারা নিয়েই বাংলাদেশে ঢোকে আমফান। কিন্তু তাতেও রক্ষা পায়নি দেশটি। বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ, দক্ষিণ ও উত্তরের প্রায় ২৫ টি জেলা ঝড়ের আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ হারায়।ঝড়ের তীব্রতা বুঝে আগেই সংযোগ ছিন্ন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থাগুলি। ঝড়ের শেষ ঝাপটাতেই প্রায় প্লাবিত ওপার বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালি, বগুড়া, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, পাবনা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, নাটোরে সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ সংস্থার সূত্র জানা গেছে, এই মুহূর্তে প্রায় দেড় কোটি মানুষ বিদ্যুৎহীন পরিস্থিতিতে আছেন। দেশের মোট ৩ কোটি ৬৪ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের কাছে আলো পৌঁছে দিতে কার্যত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে তারা। বিদ্যুৎহীন অবস্থার সঙ্গে মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই একটা বিরাট ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে। কুষ্টিয়াতে একটি গ্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্রান্সফরমার পুড়ে সেখানকার ক্ষতির মাত্রা দ্বিগুণ করেছে। গোটা দেশজুড়ে প্রায় দেড় হাজার পোল ভেঙে মিশে গেছে মাটিতে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনার অবস্থাও তথৈবচ। একের পর এক গাছ ভেঙে একপ্রকার ধ্বংসস্তূপে চেহারা নিয়েছে বাংলাদেশও। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের প্রতিমন্ত্রী কাল নিজ বাসভবন থেলে ভিডিও কনফারেন্সে সমস্ত বিভাগীয় কর্মকর্তাকে গোটা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে দ্রুত মেরামতের নির্দেশও দেন।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মতোই সেখানেও প্রায় বিঘের পর বিঘে জমি তছনছ করেছে আমফান। প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের দিকে। ধান কাটা হয়ে যাওয়ার জন্য বোরো ধানের ক্ষতি কিছুটা কম হলেও ভুট্টা, পাট, সবজি, তিল, কলা এবং বিশেষত আমের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরায় প্রচুর পরিমাণ আমের ক্ষতি হয়। প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল এবার। প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে।
প্রায় একটা গোটা দুঃস্বপ্নের রাত কাটিয়ে উঠল এপার-ওপার দুই বাংলাই। চারিদিকে শুধুই মৃত পশুপাখিদের ভিড়, মানুষের হাহাকার। সুন্দরবনের প্লাবিত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হয়তো পৌঁছনো যায়নি এখনও। এই তছনছের আরো স্বচ্ছ চেহারা সামনে আসবে আগামীতে। অভিশাপের মতো জমির পর জমিতে আঁকা থাকবে এই ঝড়ের রুদ্র রূপ।