তাল গাছের মাথায় বাসা বেঁধেছিল এক বাবুই দম্পতি। প্রায় ৩৩টি সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। সেই সংসারেই হঠাৎ আগুন লাগল। আগুন লাগিয়েছেন স্থানীয় কৃষক জালাল সিকদার। সম্প্রতি এই ঘটনাই ঘটেছে বরিশালের নলছিটি উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে। বছরখানেক আগেই লালমনিরহাটে এক ব্যক্তি চাতালে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে অগুণতি পাখি হত্যা করে। প্রায় একই ঘটনার ছায়া দেখা গেল আবারও। ঈশ্বরকাঠি গ্রামের স্থানীয় মানুষরা ইতিমধ্যে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় মানুষরা জানিয়েছেন, জালাল সিকদার নামে ওই কৃষক কাপড়ে আগুন ধরিয়ে তা তালগাছের বাবুইয়ের বাসায় ধরিয়ে দেন। এর ফলে দেখতে দেখতে প্রতিটি বাবুই শাবক মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সংখ্যাটা কারোর কারোর মতে ৩৩। কেউ আবার বলছেন ৬০টির বেশি বাবুই শাবক বাস করত তালগাছে। তবে জালাল সিকদারের বক্তব্য, বাবুই পাখিগুলি তাঁর জমির ধান নষ্ট করছিল বলেই তিনি পাখিদের পুড়িয়ে মেরেছেন।
মানুষ যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, এমনটা ভাবতেই অবাক লাগে। স্থানীয় মানুষরা মনে করছেন তেমনটাই। ইতিমধ্যে স্থানীয় এক পক্ষীপ্রেমী অভিযোগ জানিয়েছেন ঝালাকাঠি বনবিভাগেও। অবশ্য বনবিভাগের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি খুলনা বন ও বন্যপ্রাণী বিভাগের আওতায় পড়ে। তাঁদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ঝালাকাঠি বনবিভাগ মূলত সামাজিক বনভূমি নিয়ে কাজ করলেও মানবিকতার খাতিরে তাঁরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে নলছিটি উপজেলার নির্বাহী অফিসার রুম্পা সিকদার পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করেছেন।
প্রতিবেশীদের চাপের মুখে দোষ স্বীকার করেছেন জালাল সিকদার। ভবিষ্যতে আর কোনোদিন এমন কাজ করবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি। যদিও এখনও পর্যন্ত তাঁর শাস্তির কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এই বিষয়ে বন ও বন্যপ্রাণী বিভাগই শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন রুম্পা সিকদার। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমেই জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে বলে মনে করছে প্রশাসন। তবে এবারের ঘটনায় প্রতিবেশীদের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভ প্রমাণ করল মানুষের মধ্যে সচেতনতা ক্রমশ বাড়ছে। প্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই ঘটনা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়।
আরও পড়ুন
পরিযায়ী পাখিদের মৃত্যু রুখতে অন্ধকারে ফিলাডেলফিয়া
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ভারতের পাখি প্রজাতির এক-তৃতীয়াংশই সুন্দরবনে, বাড়ছে সংখ্যাও