বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বাসিন্দা অপু সরকার। ছোটো থেকেই তার ইচ্ছা নানা দেশ ঘুরে দেখার। বড়ো হলে নিশ্চই নানা দেশে পাড়ি দেবে, ভাবত সে। কিন্তু না, এখনও সেই স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছে। অর্থনৈতিক কারণে নয়, বরং সমস্যা আরও গুরুতর। ভিনদেশে পাড়ি দিতে গেলে পাসপোর্ট প্রয়োজন। আর পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে গেলে আঙুলের ছাপ দিতে হবে। কিন্তু অপুর হাতের আঙুলে কোনো ছাপ নেই। তার হাতের চামড়া অন্যান্য অঙ্গের মতোই মসৃণ।
শুনতে আশ্চর্য লাগলেও অপুর বাবা বা ঠাকুর্দা কারোর হাতের আঙুলেই কোনো ছাপ নেই। অবশ্য তাঁরা এর জন্য তেমন সমস্যায় পড়েননি। ভাবতেও পারেননি এটা সমস্যার কারণ হতে পারে। তখন বায়োমেট্রিক তথ্যের ধারণা ছিল না। কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বায়োমেট্রিক তথ্যই হল আঙুলের ছাপ। প্রথম সমস্যা শুরু হয় ২০০৮ সালে। অপুর তখনও ১৮ বছর বয়স হয়নি। কিন্তু তাঁর বাবা অমল সরকার এবং পরিবারের বাকিদের জন্য নতুন করে রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে হয়। আর তখনই বায়োমেট্রিক তথ্য হিসাবে আঙুলের ছাপ চাওয়া হয়। অমল সরকার অনেক চেষ্টা করেও সরকারি কর্তাদের বোঝাতে পারেননি যে তাঁর আঙুলে কোনো ছাপ নেই। তবে দীর্ঘদিন ধরে নানা অফিসে ঘুরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত একটি পরিচয়পত্র পেয়েছেন তিনি।
অপুর পরিবারের এই রোগ বিরল হলেও একেবারে অভূতপূর্ব নয়। ২০০৭ সালে সুইৎজারল্যান্ডের ডার্মাটোলজিস্ট রপফেসর ইটিন প্রথম এই রোগের হদিশ পান। গবেষণার পর তিনি দেখান, জিনগত ত্রুটির জন্যই এমন ঘটনা ঘটে। আর সেই জিব বংশপরম্পরায় কাজ করে। ফলে পরিবারের সকলের মধ্যেই এই রোগ দেখা যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছে অ্যাডার্মাটোগ্লিফিয়া। অপু সরকার ও তাঁর পরিবারের মধ্যেও একই ত্রুটি আছে কিনা, সেটা পরীক্ষার জন্য প্রফেসর ইটিন এগিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তাতে শুধুই নিশ্চিত হওয়া যায়। সামাজিক ও প্রশাসনিক জটিলতার মীমাংসা হবে না তাতে। পাসপোর্ট তো দূরের কথা, ড্রাইভিং লাইসেন্সও পাননি অপু। এমনকি সিমকার্ড কিনতে হয় মায়ের নামে। ক্রমশ সমস্ত পৃথিবী যেভাবে বায়োমেট্রিক তথ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, তাতে সমাধান কোথায় জানেন না কেউই।
তথ্যসূত্র - The family with no fingerprints, Mir Sabbir, BBC News
Powered by Froala Editor