বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। মূলত কৃষিকাজ করেই বহু মানুষ অন্ন সংস্থান করেন এ-দেশে। অথচ বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার কৃষিপদ্ধতি বেশ খানিকটা আলাদা। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র। অথচ অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী এই এলাকার মানুষজন দারিদ্রতা ভুলে নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চান। বংশক্রমানুসারে এখানকার মানুষ ঝুম পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন। যুগ পাল্টালেও, পরবর্তী প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের মানসিকতায় বদল আসেনি। তাই পূর্বপুরুষের চাষপদ্ধতি বজায় রেখে সন্তানরা তাঁদের স্বীকৃতি জানালেন।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাদারবন উপজেলা মূলত একটি পার্বত্য অঞ্চল। নাতিশীতোষ্ণ এই অঞ্চলের মানুষদের মূল জীবিকা চাষবাস। অত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়া সত্ত্বেও চিম্বুক পাহাড়ের এই মানুষরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ঝুম চাষ করে দিন গুজরান করেন।
কিন্তু কোনো পিতা-মাতাই তাঁদের সন্তানকে নিজেদের মত কষ্টে বড় করতে চান না। তাই এখানকার মানুষেরা ছেলে-মেয়েদের চাষাবাদ থেকে দূরে রাখেন। তাঁদের স্বপ্ন, ছেলেমেয়েরা যাতে পড়াশোনা করে সুস্থভাবে জীবন নির্ধারণ করতে পারে। তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতেই অমানুষিক পরিশ্রম করেন বাবা-মায়েরা।
আর সেইসব বাবা-মায়েদের জন্যই সন্তানরা এবার এগিয়ে এলেন। তাঁদের কষ্টকে স্বীকৃতি দিতে তাঁরা বাবা-মায়ের সঙ্গে হাত লাগালেন চাষের জমিতে। পাহাড়ে ঝুমের ধান কাটলেন তাঁরা নিজের হাতেই। শুধু তাই নয়, বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগও নিলেন।
ঝুম চাষ মূলত ধাপে ধাপে পাহাড় কেটে করা হয়। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই এই পদ্ধতিতে চাষ করেন। জমির উর্বরতা কমে গেলে, স্থান পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় গিয়ে চাষাবাদ করা হয়।
সামাজিক প্রতিষ্ঠা পাবার পরও তাঁরা ভুলে যাননি তাদের জন্মস্থান। শিকড়ের টানেই গ্রামে ফিরে এসে চাষের জমিতে হাত লাগালেন। বাবা-মায়ের স্বপ্ন সত্যি করার পাশাপাশি এভাবে তাঁদের কষ্ট লাঘব করারও চেষ্টা করলেন তাঁরা।