হিন্দি-হিন্দু আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মিছিল, নববর্ষে ‘বাংলা ভাবনা পরিক্রমা’র সাক্ষী কলকাতা

“বর্তমানে সারা দেশজুড়ে যে হিন্দি-হিন্দু জাতীয়তাবাদী আগ্রাসন চলছে, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গেলে আমাদের নিজস্ব সংকৃতিকে তুলে ধরতেই হবে। আর বাংলার সংস্কৃতি সবসময় যেকোনো ধরণের আগ্রাসন রুখে এসেছে। ইতিহাস বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আমরা কোনোদিনই নিজেদের আত্মপরিচয় নিয়ে দাঁড়াতে পারবো না।” জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে কলেজ স্ট্রিট অবধি মিছিলের শেষে এভাবেই নিজেদের ভাবনার কথা জানালেন ‘বাংলা ভাবনা পরিক্রমা’-র আহ্বায়ক অম্লান হাজরা।

বাংলা নববর্ষের বিকালে এক ব্যতিক্রমী মিছিলের সাক্ষী থাকল শহর কলকাতা। ভোটের মরসুমে নানা রাজনৈতিক দলের মিছিল তো রোজই হচ্ছে। তবে ছাত্র-যুবদের এই মিছিলের চেহারা একেবারে অন্যরকম। মিছিলে হাতে হাতে ছিল রং-তুলি-পোস্টার। কোথাও বাংলার লোকসংস্কৃতির ছবি। আবার কোথাও বাঙালি মনীষীদের প্রতিকৃতি। হিংসা আর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এইসবই হয়ে উঠছে অস্ত্র। বিকাল ৪টে নাগাদ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে শুরু হয় মিছিল। মিছিল কলেজ স্ট্রিট মোড়ে এসে পৌঁছলে সেখানে আয়োজন করা হয় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। গানে, কবিতায় আরও একবার নিজেদের মধ্যেকার বাঙালিয়ানাকেই ঝালিয়ে নিল যুবসমাজ।

‘বাংলা ভাবনা পরিক্রমা’ মনে করিয়ে দেয়, এই দেশ চৈতন্য-লালনের দেশ। এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই। অম্লান হাজরার কথায়, “আমরা রাম বলতে রামমোহনকেই বুঝি।” এই বাংলার বুক থেকেই শুরু হয়েছিল উনিশ শতকের নবজাগরণের যাত্রা। ব্রিটিশ সরকারের বিভেদের রাজনীতিকে ব্যর্থ করে হিন্দু-মুসলমানের হাতে রাখি বেঁধে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। মিছিলের আগে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের সময়ও সেইসব ইতিহাসকেই মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন মিছিলের উদ্যোক্তারা।


তবে এই মিছিল হিন্দি-হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিপরীতে কোনো বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তুলে ধরার জন্য নয়। এমনকি ভারতের সার্বভৌমত্বের ধারণা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনো অভিপ্রায়ও নেই। অম্লানের কথায়, “প্রত্যেক অঞ্চলের নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি থাকে। মানুষের দীর্ঘদিনের জীবনযাপন থেকে এই সংস্কৃতির জন্ম হয়। বাংলা ভাবনার সঙ্গে তাই ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছেন সেইসব মানুষরাও, বিহার বা ওড়িশা বা অন্য কোনো রাজ্য থেকে এসে কর্মসূত্রে যাঁরা বাংলার অংশ হয়ে গিয়েছেন।” এইসমস্ত বহুস্বরকে একসঙ্গে নিয়েই তো গড়ে ওঠে ইতিহাস। বাংলা মানে এমন এক সংস্কৃতি যার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে বিকশিত হয়েছে আরও নানা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র। সেখানে সাঁওতালি, গোর্খা, টোটো, ওঁরাও সংস্কৃতি মিলেমিশে গিয়েছে। ভোরের আজানের সঙ্গে মিশে গিয়েছে সন্ধ্যার শাঁখের আওয়াজ। হিংসা আর হানাহানির মধ্যে আজ সেই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাই ভীষণ প্রয়োজন।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More