রঙের প্রলেপে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে মাটির দেওয়াল (Wall Art)। ফুটে উঠেছে মাদল বাজানোর দৃশ্য। আদিবাসী নাচের ছবি। পোষ্য গবাদি পশুকে প্রদীপের ওমে বরণ করে নেওয়ার ছবি। হ্যাঁ, এসব পুরুলিয়ার সহরায় উৎসবেরই খণ্ডচিত্র। সেইসঙ্গে আলপনা এবং গ্রাম্য পরিবেশ ও ফুলের নিদর্শন তো রয়েইছে। অপার্থিব এই দেওয়ালচিত্র দক্ষ কোনো শিল্পীর হাতে আঁকা, এক ঝলক দেখলেই তা বোঝা যাবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, তিনি পেশায় একজন পুলিশকর্মী (Police)।
বিজয় মুর্মূ (Bijoy Murmu)। প্রান্তিক পুরুলিয়ার উৎসব, পরবের ছবি ফুটে উঠল বলরামপুরের ডুমরিডি’র এই বাসিন্দার হাত ধরেই। জন্ম, বেড়ে ওঠা বলরামপুরের এই গ্রামে হলেও, কর্মসূত্রে এখন গ্রামের বাইরেই অধিকাংশ সময় থাকতে হয় তাঁকে। পুলিশের দায়িত্ব তো আর কম নয়। কিন্তু নিজের সংস্কৃতি, বাড়ির পরিবেশ, আমেজকে কী ভুলতে পারা যায়? বিজয়ও পারেননি। সহরায় উৎসবের জন্য সপ্তাহ খানেকের ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। আর সেই ফাঁকেই রং-তুলি হাতে সাজিয়ে তোলেন নিজের বাড়ির দেওয়াল।
প্রথাগতভাবে কোনোদিনই ছবি আঁকার ক্লাস নেননি ডুমরিডির বাসিন্দা বিজয়। বরং, বলা যেতে পারে শিল্প তাঁর সহজাত। একটা সময় পেট চালাতে শিল্পকেই হাতিয়ার করে নিয়েছিলেন তিনি। কখনো বাড়ি বাড়ি রং করে বেড়িয়েছেন নানান জায়গায়। কখনো আবার দেওয়াললিখন, বিজ্ঞাপন লিখন, সাইনবোর্ড তৈরির কাজও করেছেন তিনি। এসবের বাইরে রয়েছে তাঁর অসংখ্য ব্যক্তিগত কাজও। মন্ত্রমুগ্ধ সেসব শিল্প কয়েক মুহূর্তের জন্য বাকরুদ্ধ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আরও পড়ুন
৩০ বছর ধরে আঁকা ছবি, অবশেষে প্রকাশ্যে শিল্পীর সৃষ্টি
আরও পড়ুন
একটিও ছবি বিক্রি না করেই ১০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক এই শিল্পী!
বছর ছয়েক আগে পুলিশের দপ্তরে চাকরি পান বিজয়। গায়ে চাপে খয়েরি উর্দি। আর কাঁধে দায়বদ্ধতা। শিল্পজীবনকে বিদায় জানিয়ে নতুন এক দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তাতে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে ঠিকই, কিন্তু শিল্পসৃষ্টির আনন্দ? তা তো অনেকটা নেশার মতোই। তার থেকে কি মুখ ফিরিয়ে থাকা সম্ভব? গ্রামে কয়েকদিনের ছুটিতে ফিরেই সেই মাদকতায় মজলেন বিজয়। হাতে তুলে নিলেন রং-তুলি। পেশা-র গণ্ডির মধ্যে যে শিল্প আটকে থাকে না— তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন তিনি। শুধু শিল্পীই নন, বিজয় মুর্মূ বলরামপুরের তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণাও বটে…
আরও পড়ুন
শিল্পের খিদে মেটাতে ভিন্নপথে আত্মানুসন্ধান কে-পপ গায়কদের
ছবিঋণ - দুর্গাদাস মাহান্তি
Powered by Froala Editor