করুণ সুরে বাঁশি বাজছে। সবুজ গালিচা পাতা মাঠ, বট-শিরিষের গাছ শিহরিত হয়ে উঠছে আর চারপাশে, ছোট খালটির পাড় পেরিয়ে, অপর গাঁয়ের সামান্য এক বালিকাকে বিবশ করছে এই সুর। তার বাউল অঙ্গ হাতের কাজ ফেলে, মনের লজ্জা ফেলে চুপচাপ তাকিয়ে আছে সুরের দিকে, বাঁশির দিকে। আর তখনই তার অবাধ্য পা ছুটে চলেছে মাঠ পেরিয়ে, ঘাট পেরিয়ে সেই বাঁশির সুরের দিকে।
আজ ফিরে যাও হে বঁধু
কাইল ফিরে যাও
কারো সঙ্গে ভাব কর না
আমার মাথা খাও
গরু, ছাগল চরে বেড়াচ্ছে। আর এক আনমনা রাখাল, যাকে আঞ্চলিক বাংলায়, ঝাড়খণ্ডী বাংলায় বলা হয় 'বাগাল', আপন সুরে গেয়ে যাচ্ছে জীবনের করুণ, নিঃসঙ্গতার দিকগুলোকে। বাঁশি আর কথার মেলবন্ধনে তৈরি হচ্ছে মাঠঘাটের গান 'বাগালগীত' বা 'রাখাল গীত'। এই গানগুলোর রচয়িতা এবং গায়ক রাখাল বালক নিজেই। নিজেই রচনা করে, নিজেই সুর দেয়, নিজেই গায় তারা এই গানগুলো। এখনও মাঠেঘাটে কান পাতলে এই গান শোনা যায়। গানগুলোর বেশিরভাগ বিষয় জীবনের গল্প। জীবনের কথা।
বাগাল মানে রাখাল। মাঠে গরু, মোষ, ভেড়ার পাল চরাতে চরাতে এইসব গানগুলো ঝাড়খণ্ডের নিঝুম দুপুরে শোনা যায়। মাঠে ঘাটে ছড়িয়ে পড়ে করুণ রাগিণীর সুর। ধূ ধূ নিঃসঙ্গতায় মোড়া এইসব গানের কথা। রাখালরা মাঠে ঘুরে বেড়াতে বেড়ায়ে এই গানগুলি গাইতে থাকে। গানগুলোর মধ্য দিয়ে এক করুণ সুর নির্ঝরিত হয়। সুরের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে জীবনের নিঃসঙ্গতার দিকটি...
মাছ পুড়া পাখাল ভাত
বাগাল বাবুর তরে
সত্য করি বলবি বাগাল
গোঠ কত দূরে