১৯৯৪ সালের ১৭ জানুয়ারি। আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেস কেঁপে ওঠে প্রবল ভূমিকম্পে। ক্ষয়ক্ষতি, হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায় অনেক। কিন্তু সেই সঙ্গে আরও একটি ব্যাপার ঘটে। দুর্যোগের ঠিক পরেই, বিদ্যুৎ সংযোগ চলে যাওয়ার পর মার্কিন ইমারজেন্সি নম্বরে ভিড় লেগে যায়। সবার এক বক্তব্য, রাতের আকাশে যে মেঘের মতো দেখা যাচ্ছে, সেটার জন্য কি ভূমিকম্প দায়ী? আধিকারিকরা হতবাক হয়ে যান একেবারে। রাতের ওই রুপোলি মেঘ যে আসলে মিল্কি ওয়ে বা ছায়াপথ, সেটা এই বিশাল সংখ্যক মানুষরা বুঝতেই পারেননি!
ওপরের বর্ণনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমাদের চারপাশে এরকম অনেক মানুষই ছড়িয়ে আছেন। বিশেষ করে, শহরাঞ্চল ও শহরতলিতে। তারা-ভরা আকাশ কখনই দেখতে পাই না আমরা। আর এখান থেকেই জন্ম নেয় একটি নতুন দূষণের সংজ্ঞা। আলো-দূষণ।
আলো থেকেও দূষণ হতে পারে, সেটা কি কখনও ধারণা করেছিলাম আমরা? বোধহয় না। আর ধারণা করিনি বলেই যত্রতত্র আলোয় ভরিয়ে দিয়েছি। ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একটি গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বের ৮০ শতাংশ অঞ্চলই এই আলো দূষণের কবলে। ছায়াপথ তো দূরের কথা, রাতের আকাশও পরিষ্কার করে দেখা যায় না। অনেক সময়, স্রেফ এর জন্যই ব্যাঘাত ঘটে মহাকাশ গবেষণাতেও।
আলো দূষণ বলতে কৃত্রিম আলোর অপর্যাপ্ত ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারকেই চিহ্নিত করেন বিজ্ঞানীরা। সেটা ঠিক কী, আমরা চারিদিকে চোখ দিলেই দেখতে পাই। রাস্তা-ঘাটে জোরালো গাড়ির আলো থেকে কর্পোরেট এলাকা— সমস্ত জায়গাতেই দূষণ। এমনকি, সমুদ্র ও নদীর ধারগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে অতিরিক্ত জোরালো আলো। এই সবকিছুর ফলে ক্ষতি হচ্ছে জীবজন্তুর। বহু পাখি, সামুদ্রিক জীব, পশুর জীবনহানিও হচ্ছে। আমাদেরও কি হচ্ছে না? গাড়ির জোরালো আলো চোখে পড়ে স্বাভাবিক দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটায়, যার ফলে অনেক সময় ঘটে যায় দুর্ঘটনা।
যে আলো আমাদের পথ দেখায়, আলোকিত করে, সেটাই আজ দূষণের কবলে। দায়ী আমরাই। জীবনের অপচয় হয়; অপচয় হয় শক্তিরও। এদিকে আজও পৃথিবীর কিছু জায়গায় আলো পৌঁছয়নি। এই দূষণ কমিয়ে যদি সঠিকভাবে সেটার ব্যবহার করতে পাড়ি, তাতে ক্ষতি কি?