গাছের ডালে খড়কুটো দিয়ে তৈরি একটি বাসা। সেখান থেকে মুখ বাড়িয়ে রয়েছে ছোট্ট এক বাজপাখির (Hawk) ছানা। হয়তো খাবার অনুসন্ধানে গেছে তার মা। কিন্তু হঠাৎ করেই মৃত্যু ঘনিয়ে এল যেন। আকাশ থেকে দ্রুত গতিতে তার দিকে ধেয়ে এল প্রকাণ্ড এক ঈগল (Eagle)।
কানাডার ব্রিটিশ কলোম্বিয়ার (British Columbia) এসকুইমল্ট লাগুন মাইগ্রেটরি বার্ড স্যাংচুয়ারি সম্প্রতি ধরা পড়ল এমনই এক দৃশ্য। সাক্ষী ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘গ্রাউলস’-এর প্রাণীবিদ পাম ম্যাকার্টনি। ব্রিটিশ কলোম্বিয়া তো বটেই, গোটা কানাডা-জুড়েই অসুস্থ, আহত এবং দুর্ঘটনাগ্রস্ত বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করে থাকেন এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। কিন্তু এক্ষেত্রে ছোট্ট বাজ শাবকটির প্রাণ বাঁচানোর কোনো পথই ছিল না পামের কাছে। আর শিকারি ও শিকারের মধ্যে যে খাদ্য-খাদক সম্পর্ক— তা তো প্রকৃতিরই নিয়ম। অসহায় হয়ে শুধুমাত্র এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন পাম। তবে তাঁর সমস্ত আশঙ্কাই নস্যাৎ করে দেয় হিংস্র ঈগলটির ‘মানবিকতা’। প্রাণ না নিয়ে, বাজপাখির শাবকটিকে রীতিমতো দত্তক নেয় ঈগলটি।
হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। বিশ্বের হিংস্রতম শিকারি পাখিদের মধ্যে অন্যতম ঈগল। ইঁদুর, মাছ, ছোটো বেড়াল তো বটেই, এমনকি নেকড়ের শাবককেও যে পাখি শিকার করে থাকে, শিকার হাতের সামনে পেয়েও তার থেকে এমন প্রতিক্রিয়া খানিক অপ্রত্যাশিত তো বটেই।
আগ্রহবশতই এর পর বেশ কিছুদিন ধরেই বাজপাখির বাসাটির দিকে নজর রেখেছিলেন পাম। ভিডিও ক্যামেরায় রেকর্ড করেছিলেন সপ্তাহ তিনেকের দৈনন্দিন ঘটনাবলী। যা বেশ অবাক করার মতোই। না, দিন পর দিন পেরিয়ে গেলেও বাসায় ফেরেনি ছোট্ট শাবকটির মা। বরং, সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছিল শিকারি ঈগলটিই। খাবার এনে মুখে করে খাইয়ে দেওয়া থেকে উড়তে শেখানো— নিজের সন্তানের মতোই প্রায় তিন সপ্তাহ সে লালনপালন করেছে বাজ-শাবকটিকে।
এ যেন ডিনসি-র কোনো অ্যানিমেটেড সিনেমার প্রেক্ষাপট। এমন এক কাল্পনিক দুনিয়া যেখানে এক প্রজাতি অনায়াসেই আত্মীয় হয়ে উঠতে পারে অন্য প্রজাতির। এর আগে হরিণ শাবকের প্রাণ রক্ষা করতে দেখা গিয়েছিল সিংহীকে। কখনও আবার দেখা গিয়েছিল, চিতা বাঘ দুধ খাওয়াচ্ছে জেব্রার শাবককে। এবার ব্রিটিশ কলোম্বিয়ার এই দৃশ্য আরও একবার প্রয়াণ করে দিল মানবিকতার অধিকারী বন্যপ্রাণীরাও…
Powered by Froala Editor