সেদিনের সেই ছোট্ট হাতির শাবকটির দেখতে দেখতে সাত বছর বয়স হয়ে গেল। আজও কি তার মনে পড়ে সেই প্রথম দিনের কথা? তার জন্মের পরেই তাকে ফেলে দিয়েছিল নিজের মা। পায়ের আঘাতে তাকে প্রায় মৃত্যুমুখেই ঠেলে দিয়েছিল। শেনডায়োশান বনের কর্মীরা প্রথমে মনে করেছিল কোনো দুর্ঘটনা। কিন্তু আবার শিশুটিকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যেতেই তার মা তাড়া করে আসে। তারপর অবশ্য বনের এক কর্মচারীর তত্ত্বাবধানেই একটু একটু করে বড় হয়ে উঠেছে সে। নাম রাখা হয়েছে, জুয়াং জুয়াং।
আজ আর তার সেদিনের কথা মনে না পড়লেও, সেই কর্মচারীর ঠিক মনে আছে। সদ্যজাত শিশুটির তখনও চোখ ফোটেনি। ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না কিছুই। কিন্তু তার মায়ের অবহেলার কথা সে বুঝতে পেরেছে। সেই ছোট্ট লাল চোখ দুটি থেকে তাই গাল বেয়ে নেমে এসেছে জলের ধারা। কিছুতেই তাকে ভোলানো যায় না। একটানা পাঁচ ঘণ্টা ধরে কাঁদার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে।
বলা হয়, এই পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন বন্ধন হল মাতৃত্বের বন্ধন। বিশ্বের কোথাও এমন কোনো শক্তি নেই, যা এই বাঁধন ছিঁড়তে পারে। তবে ব্যতিক্রমও কি ঘটে না? এক্ষেত্রেই ঘটেছে। কী কারণে নিজের সদ্যজাত সন্তানকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল তার মা, সেকথা জানা সম্ভব নয়। তবে ২২ মাস যে মায়ের গর্ভে একটু একটু করে বড় হয়েছে শিশুটি, তার কাছ থেকে এমন প্রত্যাখ্যান সে আশা করেনি। সেই দুঃখের কাছে কোনোকিছুই আর জায়গা পায়নি। পশুরাও কি দুঃখ পায়? উত্তরটা সেদিন সেই সদ্যজাত শিশুটিই দিয়েছিল।
মানুষের মতোই পশুদেরও যে দুঃখ কষ্টের আবেগ অনুভূতি বর্তমান, একথা অনেকদিন আগেই মেনে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে তারপরেও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেন। আজও অনুভূতিহীন মানুষদের তুলনা করা হয় পশুর সঙ্গে। অথচ নানা ঘটনায় প্রমাণ পাওয়া যায়, তাদের আবেগের অনুভূতি মানুষের থেকে কোনো অংশে কম তো নয়ই, বরং বেশি বললেও অস্বীকার করা যাবে না। তবে মানুষের মতোই তারাও সমস্ত দুঃখ কষ্ট অতিক্রম উঠে দাঁড়াতে জানে। অতীতকে পিছনে ফেলে গড়ে তুলতে জানে ভবিষ্যত।
সাত বছরের জুয়াং জুয়াং, হাতিদের বয়সের নিরিখে এখনও সে বাচ্চা। আশ্রয়দাতা বনকর্মীর সঙ্গে এখন সে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়, খেলা করে। এই নতুন জীবনকেই সে আপন করে নিয়েছে। কিন্তু একদিন মাকে হারানোর যন্ত্রণায় তার চোখ দিয়ে যে অশ্রু ঝরে পড়েছিল, তাকে তো অস্বীকার করা যায় না।