২৫০ পেরিয়েছে বয়স, বিলুপ্তির পথে বাংলার প্রাচীন মিষ্টি ‘বাবরসা’

কথায় বলে, রসে বশে বাঙালি। বাস্তবিকই তাই। বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে কত জানা-অজানা মিষ্টি। কিছু কিছু জাতে উঠেছে, কিছু কিছু আবার হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। যেমন বাবরসা। পশ্চিম মেদিনীপুরের এক সময়ের প্রসিদ্ধ এই মিষ্টির নাম হয়ত হাতে-গোনা কিছু লোক শুনে থাকবেন। প্রচারের অভাবে বাবরসা আজ রীতিমত ভুগছে।

বাবরসা। নাম শুনেই হয়ত মনে পড়বে মুঘল সম্রাট বাবরের নাম। এই মিষ্টির পিছনে যে সমস্ত ইতিহাস আছে, সেখানে অবশ্য জড়িয়েও আছেন তিনি। কিছু জনের মতে, মেদিনীপুরের ক্ষীরপাইয়ের এই প্রসিদ্ধ মিষ্টি নাকি খেয়েছিলেন স্বয়ং বাদশা বাবর। অবশ্য আরেকটা অংশের মত একেবারে অন্য। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ক্ষীরপাইয়ের স্থানীয় সংগ্রাম। তখন আঠেরো শতকের মাঝামাঝি সময়। শান্ত ক্ষীরপাই হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠল। গ্রামে আক্রমণ করল বর্গিরা। তাদের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠল ক্ষীরপাইবাসী। সেই সময় এডওয়ার্ড বাবরশ বলে এক সাহেবের সহায়তায় সেই বর্গিদের হারানো সম্ভব হল। তখনই, সাহেবকে সম্মান জানানোর জন্য ক্ষীরপাইয়ের বাসিন্দারা তৈরি করেন একটি বিশেষ মিষ্টি। নাম হয় ‘বাবরসা’।

জিভে জল আনা এই মিষ্টির একটা সময় কদর ছিল সারা বাংলায়। শুধু বাংলায় কেন, অন্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছিল এটি। কিন্তু আজ? বহু লোক নামই জানে না প্রায় ২৫০ বছর পুরনো এই মিষ্টির। প্রচারের চূড়ান্ত অভাব, দাম না মেলা, মূল্যবৃদ্ধি— সমস্ত কিছুর চাপে জর্জরিত বাবরসা। মার খাচ্ছেন কারিগররা। ক্ষীরপাইয়ের অনেকে ছেড়ে দিয়েছেন বাবরসা বানানো, ভবিষ্যৎ প্রজন্মও আকৃষ্ট হচ্ছে না সেভাবে। এভাবেই, স্রেফ অবহেলায় মুছে যাওয়ার উপক্রম এর। ক্ষীরপাইয়ের দাবি, অবিলম্বে জিআই ট্যাগ দেওয়া হোক বাবরসা’কে। প্রসারণ ঘটানো হোক ব্যবসার। তা না হলে, অচিরেই বাংলা হারাবে বাবরসা-কে।

Latest News See More