গর্ভাবস্থা থেকেই কান্নার অনুশীলন? ইঙ্গিত সাম্প্রতিক গবেষণার

ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর, কোনো শিশুর প্রাণস্পন্দনের প্রথম প্রমাণ মেলে তার কান্নার মধ্যে দিয়েই। চিকিৎসকদের মতে, প্রথম কান্না সুস্বাস্থ্যের স্বাভাবিক লক্ষণ। আসলে মাতৃগর্ভে থাকার সময় শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না শিশুদের। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রথম শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়া শুরু হলেই, কান্নার মধ্যে দিয়েই তার বহিঃপ্রকাশ করে মানবশিশু। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল আরও এক বিচিত্র তথ্য। গর্ভাবস্থায় থাকার সময় থেকেই কান্নার অনুশীলন করে মানুষের নিকটতম আত্মীয় বানরের শিশুরা। 

হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। সম্প্রতি ই-লাইফ বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র জানাচ্ছে তেমনটাই। কয়েক ডজন মারমোসেট বানরের ওপর এই পরীক্ষা চালিয়েছিলেন ফেডারাল ব্রেইন ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে গর্ভবতী মার্মোসেটের গর্ভে অবস্থিত অপত্যের অঙ্গভঙ্গি পরীক্ষা করেছিলেন তাঁরা। সেখানেই দেখা যায়, ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রায় ২ মাস আগে থেকেই মাঝে মাঝে এক বিশেষ ধরনের অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে বানরশিশুর মুখে। যা হুবহু মিলে যায় কান্নার অভিব্যক্তির সঙ্গে। তাছাড়াও গর্ভাজাত অবস্থায় তাদের মুখে অন্যান্য অভিব্যক্তিও পৃথক পৃথকভাবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। 

সাধারণত দক্ষিণ আমেরিকায় প্রাপ্ত এই বিশেষ বানর প্রজাতির ওজন হয় মাত্র ৮ থেকে ৯ আউন্স। অর্থাৎ, এক কাপ চিনির সমান। আয়তন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একটি আঙুলের সমান। সবমিলিয়ে প্রায় ২০টিরও বেশি মারমোসেট বানরের প্রজাতি রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায়। শারীরিকভাবে মানুষের থেকে আলাদা হলেও, মারমোসেট আদলে প্রাইমেট। অর্থাৎ, হোমো সেপিয়েন্স বা মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত তাদের আচরণ। ইঁদুর কিংবা অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় তাদের সঙ্গেই বেশি মিল পাওয়া যায় মানবশিশুর। আর সেখান থেকেই প্রশ্ন তুলছেন গবেষকরা। তবে কি মানবশিশুও গর্ভাবস্থায় কান্নার অনুশীলন শুরু করে? 

আজ থেকে প্রায় চার-পাঁচ দশক আগের কথা। ১৯৭০-৮০-র দশকে আল্ট্রাসাউন্ডের ব্যবহারে গর্ভবতী মহিলাদের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, গর্ভাবস্থায় মানবশিশুর আচরণ পর্যবেক্ষণ করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই প্রক্রিয়া। কারণ, আল্ট্রাসাউন্ড মানবশিশুর স্বাস্থ্য পক্ষে ক্ষতিকর। তবে সেইসময় কার বেশ কিছু ছবি ও নথি অবশিষ্ট আছে আজও। আর তাদের সঙ্গে বেশ মিল লক্ষ করা গেছে মারমোসেট শিশুদের। গবেষণার মূল লেখক, ড্যানিয়েল তাকাহাসির অভিমত, মানবশিশুও যে গর্ভাবস্থা থেকেই কান্নার অনুশীলন করে, সেই সম্ভাবনাই প্রকট হচ্ছে ক্রমশ। 

পরবর্তী পর্যায়ে এই গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য শিম্পাঞ্জির ওপর একই পরীক্ষা করার অনুমতি চেয়েছেন গবেষকরা। কারণ, মানুষের সঙ্গে মারমোসেটের থেকেও তাদের মিল অনেক বেশি। বলা চলে, সেক্ষেত্রেও একই ফলাফল মিললে গর্ভাবস্থায় কান্নার বিষয়টিতে প্রায় নিশ্চিত হয়ে যেতে পারবেন গবেষকরা। তবে সেই গবেষণার ছাড়পত্র আদৌ মিলবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এমনকি ইতিমধ্যেই এই পরীক্ষার বিরোধিতায় সামিল হয়েছেন বহু প্রাণী অধিকারকর্মী। তবে এখনও পর্যন্ত গবেষণালব্ধ তথ্য যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন দরজা খুলে দিচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো… 

Powered by Froala Editor