আবারও একবার শিরোনামে উঠে এল ‘বাবা কা ধাবা’। দিল্লির মালভিয়া নগরের রাস্তার ধারে ছোট্ট এই খাবারের দোকানটির নাম আজ প্রায় সবাই জানেন। লকডাউনের ফলে অন্য অনেক মানুষের মতোই রোজগারের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় ধাবার মালিক অশিতীপর কান্তা প্রসাদের। স্থানীয় এক ফুড ভ্লগারের ইউটিউব চ্যানেলের দৌলতে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ এখনও মেটেনি। আর এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খবর পাওয়া যায়, ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন কান্তা প্রসাদ। বর্তমানে সফদরজং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কান্তা বাবা।
গত বছর অক্টোবর মাসে সমস্ত সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ওঠে একটি ভিডিও। গৌরব ওয়াসান নামের এক ফুড ভ্লগারের ইউটিউব চ্যানেল থেকে ছড়িয়ে পড়ে ভিডিওটি। সেদিন সারাদিনে কান্তা ও তাঁর স্ত্রী বাদামি দেবীর দোকানের আয় ছিল মাত্র ১০ টাকা। অভাবের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন দুজনেই। মর্মস্পর্শী সেই ভিডিও রাতারাতি ভাইরাল হয়ে ওঠে। কান্তা বাবাকে সাহায্য করতে চেয়ে অনেকেই যোগাযোগ করেন গৌরবের সঙ্গে। এগিয়ে আসেন বহু সেলিব্রিটিও। সবার আর্থিক সাহায্যের উপর নির্ভর করে দোকান থেকে কিছু দূরে একটি রেস্টুরেন্টও খুলেছিলেন কান্তা বাবা। কিন্তু সেই রেস্টুরেন্ট এক মাসের বেশি চালানো যায়নি।
এর মধ্যেই হঠাৎ এক অদ্ভুত ঘটনায় অবাক হয়ে যান সকলেই। কান্তা বাবাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন যে গৌরব ওয়াসান, তাঁর নামেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অভিযোগে কান্তা বাবা জানিয়েছিলেন, তাঁর জন্য অর্থ সংগ্রহের নামে প্রতারণা করেছেন গৌরব। এমনকি অর্থ সংগ্রহের জন্য গৌরব ও তাঁর পরিয়ারের লোকেদেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দেওয়া ছিল শুধু। বাবার এমন আচরণে অবাক হয়েছিলেন গৌরবও। অবশ্য তিনি মনে করেছিলেন, কারোর প্ররোচনাতেই কান্তা বাবার মন বিষিয়ে উঠেছে। তিনি নিজে এমন সন্দেহ প্রবণ মানুষ হতেই পারেন না। শুধুই প্রতারণার অভিযোগে থেমে থাকেননি কান্তা বাবা। গৌরব ওয়াসান তাঁকে খুনের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ জানান।
তবে কিছুদিন আগেই আরও একটা ভিডিও উঠে আসে অন্য এক ফুড ভ্লগারের চ্যানেলে। সেখানে সমস্ত ঘটনার জন্য গৌরবের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বাবা। আবারও অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেছেন, গৌরব চোর নয়। বরং তাঁর জন্যই নতুন করে উপার্জনের একটা রাস্তা খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁরা। সেই ব্যবসা চলেনি ভাগ্যের দোষেই। সেইসঙ্গে হুমকির অভিযোগও প্রত্যাহার করেছিলেন কান্তা বাবা। তবে এই ভিডিও ভাইরাল হতে না হতেই উঠে এল তাঁর আত্মহত্যার চেষ্টার খবর। কান্তা বাবার ছেলে অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরেই অবসাদে ভুগছিলেন। ৬ বছর আগেও একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এবারের আত্মহত্যার চেষ্টার সঙ্গে বিগত কয়েক মাসের বিতর্কের যোগসূত্র আছে বলেই মনে করছেন অনেকে। আপাতত প্রায় ৪২ ঘণ্টার উপর হাসপাতালে ভর্তি কান্তা বাবা। কিন্তু এখনও তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। সুস্থ হয়ে উঠুন কান্তা বাবা, এই প্রার্থনাই করছেন সকলে।
আরও পড়ুন
সিন্থেটিক ড্রাগে অভ্যস্ত ছিল নাৎসি সেনারা, ‘নেশা’র অভাবেই আত্মহত্যা হিটলারের?
Powered by Froala Editor