বাণিজ্যিক গাড়ির স্টিয়ারিং-এও এবার মহিলারাই, প্রশিক্ষণে আজাদ ফাউন্ডেশন

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন থেকে ধরুন একটি ক্যাব বুক করেছেন। ব্যস্ত হয়ে ড্রাইভারের নাম্বারে ফোন করলেন। প্রথম প্রশ্নই করে বসলেন, “দাদা, কোথায় আছেন?” হ্যাঁ, এই প্রশ্ন শুনতে বা করতেই আমরা অভ্যস্ত। কারণ ক্যাব ড্রাইভাররা তো পুরুষই হন। অন্তত আমরা আজও এমনটাই দেখতে অভ্যস্ত। তবে চেনা এই লিঙ্গপরিসরের বাইরে গিয়েও যে চিন্তা করা যায়, সেটাই শেখাচ্ছে দিল্লির অলাভজনক সংস্থা ‘আজাদ ফাউন্ডেশন’। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সমাজের প্রচলিত মানসিকতাতেও বদল আনছে এই উদ্যোগ। এতদিন যে কাজ শুধুই পুরুষদের বলে পরিচিত ছিল, এবার মহিলারাও সমানভাবে এগিয়ে আসছেন সেই কাজের অংশীদার হয়ে।

২০১৩ সালে প্রথম ‘উইমেন উইথ হুইলস’ উদ্যোগ নিয়ে হাজির হয় আজাদ ফাউন্ডেশন। এর আগে বস্তি অঞ্চলের ও পিছিয়ে পড়া মহিলাদের নিয়ে নানা ধরণের সচেতনতামূলক উদ্যোগ নিয়েছিল এই সংস্থা। তবে মহিলা পরিচালিত ক্যাব এক অন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। এর আগে স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মহিলাদের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। দেখেছেন, আজও এক বড়ো অংশের মহিলারাই প্রতি নিয়ত পুরুষদের নির্যাতনের স্বীকার হন। কোথাও কোথাও তাঁদের স্বামী এখনও রাতে মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে মারধোর করে। আর এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সামর্থ্যও তাঁদের নেই। কারণ একে তো সমাজ পুরোটাকে স্বাভাবিক মনে করে। তার উপর আজও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নারীরা পুরুষের উপার্যনের উপরেই নির্ভরশীল। তাই সবার আগে তাঁদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো দরকার।

আজাদ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের কেউ হয়তো কোনোদিন স্কুলেই যাননি। কেউ কম বয়সে বিয়ের পর পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছেন। অবশ্য কয়েকজন আছেন যাঁরা কলেজের গণ্ডি পার করেছেন। সবাইকে একসঙ্গে নিয়েই শুরু হয়েছে এই ‘উইমেন উইথ হুইলস’ উদ্যোগ। প্রথম প্রথম অবশ্য বাণিজ্যিক পরিবহণ সংস্থাগুলিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। তাঁদের মধ্যেও সংশয় কাজ করেছে। যদি এর ফলে ভারতের মতো দেশে ব্যবসা কমে যায়? তবে বারবার আবেদন জানানোর ফলে শেষ পর্যন্ত সাড়া মিলেছে। ক্রমশ দিল্লি থেকে সংস্থার কাজের পরিসর বিস্তৃত হয়েছে জয়পুর এবং কলকাতাতেও। আর কিছুদিনের মধ্যেই চেন্নাই শহরেও আলাদা একটি ইউনিট খুলতে চলেছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে এখন ১ হাজারের বেশি মহিলা যুক্ত এই উদ্যোগের সঙ্গে। লকডাউনে অবশ্য অনেকেই আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যে পড়েছেন। কিন্তু আজাদ ফাউন্ডেশন তাঁদের হাত ছেড়ে দেননি। এই মুহূর্তে একজন সদস্যার হারিয়ে যাওয়াও যে লিঙ্গসাম্যের লড়াইতে পরাজয় স্বীকার করে নেওয়ার সামিল।

Powered by Froala Editor