সাপলুডোকে হাতিয়ার করে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ ‘ফাঁদমুক্তি’র

লুডো, সাপলুডো— এই খেলাগুলি বহুদিন ধরে আমাদের ঘরে ঘরে জায়গা পেয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গেই হোক, বা পরিবার, সময় কাটানোর জন্য প্রায়শই বোর্ড পেতে বসে পড়ি আমরা। কেমন হয়, যদি এই সাপলুডোর বোর্ডই আমাদের সামাজিক শিক্ষার অঙ্গ হয়ে ওঠে? খেলার ছলেই শিশুরা শিখে নেয় জীবনে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র? সেরকম উদ্দেশ্য নিয়েই সম্প্রতি হাজির হল ‘ফাঁদমুক্তি’…

পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ দ্বারা অনুমোদিত এই বিশেষ খেলাটি আদতে আমাদের জীবনেরই একটা খণ্ডচিত্র। সাপলুডোর মতোই সেখানে মই ধরে কখনও উঠে যাওয়া গন্তব্যের দিকে, আবার কখনও সাপের মুখে পড়ে যাওয়া। এই ‘সাপ’ আসলে কী? কেনই বা সমাজের বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এরা? সেসব শেখার এবং জানার এক মঞ্চ হল ‘ফাঁদমুক্তি’। এই খেলার মূল লক্ষ্য যারা, সেই কিশোর কিশোরীদের বেশিরভাগই গ্রাম কিংবা মফস্বলে থাকে। এবং প্রায়শই নানা ঘটনার সম্মুখীন হয় তারা। 

‘ফাঁদমুক্তি’র পেছনে রয়েছে একটি গল্প; যার দুজন কাল্পনিক চরিত্র লীলা এবং বিকাশ। তারা একই গ্রামে বড়ো হতে থাকে। তাদের সামনে হাজির হয় নানা দৃশ্য, প্রলোভন। এখানে কাল্পনিক বলা হল বটে, কিন্তু সত্যিই কি তাই? অসংখ্য লীলা ও বিকাশ তো আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে আছে। শিশু থেকে কৈশোরে পা রাখছে তারা। ‘জীবন শুরু করো’ থেকে ‘জীবনে বিজয়ী হও’— খেলার এই ৬২টি ধাপের মাঝখানে রয়েছে বিস্তর সাপ আর মই। কী করলে এই ‘সাপ’গুলোকে চিনব ও তাদের হাত থেকে বাঁচব, কেমনভাবে চললে সাফল্যের সিঁড়ি আমাদের নাগালে আসবে, এই সবটাই শেখাবে ‘ফাঁদমুক্তি’। এতদিন স্কুলে স্কুলে গিয়ে, বা সচেতনতা শিবির করে যে সামাজিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, এবার একটা খেলার মাধ্যমে আরও সহজে সেই বার্তা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে— এমনই ধারণা উদ্যোক্তাদের… 

তবে এই পুরো খেলার আড়ালে আরও একটি দিক লুকিয়ে আছে— পাচার। এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও শিশু ও কিশোরদের পাচারের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে দেশে। শুধু মেয়েরাই নয়, ছেলেরাও অনেকসময় এর শিকার। আর করোনা অতিমারিতে এই শিশু পাচারের সমস্যা আরও বেড়ে গেছে। শুধু কি পাচার? বাল্যবিবাহ, স্কুলছুটের মতো ঘটনাও যে কাঁটার মতো রয়ে গেছে সমাজে। 

প্রহরের সঙ্গে এই পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত দুজন মানুষ— প্রসূন ভৌমিক এবং পরিচালক সুদেষ্ণা রায়। “এই পুরো ভাবনাটি প্রথমে মাথায় আসে ডঃ শুভ্রজ্যোতি মুখার্জির। তিনিই উদ্যোগ নিয়ে এই পুরো বিষয়টা তৈরি করে। এর আগেও পকসো’র (Protection of Children from Sexual Offences) বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়ে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম সব জায়গায়। এবারেও খেলার মাধ্যমে শিশু সুরক্ষা, পাচার রোধ, বাল্যবিবাহ রোধের মতো দিকগুলিকে তুলে ধরতে চেয়েছি। এই সাপলুডোর বোর্ডের মধ্যে দিয়েই সমস্ত দরকারি ফোন নম্বর, চাইল্ডলাইন হেল্পনাম্বার, বিভিন্ন সংস্থার নাম মানুষের মধ্যে পৌঁছে যাবে। সেইসঙ্গে আছে সচেতনতামূলক কথা। কোনটা করা উচিত, কোনটা করা উচিত নয় এই পুরো ব্যাপারটাই খেলার ছলে যাতে ছোটোরা বুঝতে পারে, সেই চেষ্টাই করেছি”, বলছিলেন তাঁরা… 

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে সাধারণ মানুষ— সবার কাছে যাতে পৌঁছে যায় এই ‘ফাঁদমুক্তি’র খেলা, সেটাই চান উদ্যোক্তারা। লক্ষ্য একটাই, আরও সহজভাবে সামাজিক সমস্যা, শিক্ষার মতো বিষয়গুলোকে ছড়িয়ে দেওয়া। যাতে সমস্ত রকম খারাপ দিকগুলো থেকে সরে থাকে শৈশব। তারা খোলামেলাভাবে বেড়ে উঠুক, এটাই তো চাওয়া… 

আরও পড়ুন
অজানা বাক্সের ভেতরে লুকিয়ে প্রত্নসামগ্রী! অভিনব খেলা চিনের মিউজিয়ামে

Powered by Froala Editor

Latest News See More