বয়স তখন মাত্র ১০ বছর। শ্যুটিং-এ হাতেখড়ি হয়েছে তারও বেশ কয়েক বছর আগে। দু’চোখে তখন শুধু জ্বলজ্বল করছে অলিম্পিকের মঞ্চে পৌঁছানোর স্বপ্ন। কিন্তু জীবন বদলে গেল এক লহমায়। বাড়ি ফেরার পথেই ঘটে গিয়েছিল গাড়ি দুর্ঘটনা। মেরুদণ্ডে বেশ কয়েকটা হাড় ভাঙল তো বটেই, ভয়ঙ্কর আঘাত লাগল স্পাইনাল কর্ডেও। তবে বাহ্যিক ক্ষত সেরে উঠলেও, চিরকালের মতো সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতাটাই সেদিন হারিয়েছিলেন বছর দশকের ছোট্ট কিশোরী। আক্রান্ত হন প্যারাপ্লেজিয়ায়। তারপর থেকে হুইলচেয়ারই হয়ে উঠেছিল তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী।
না, সেদিনে সেই যন্ত্রণা, প্রতিবন্ধকতা— কোনোটাই দমিয়ে রাখতে পারেনি তাঁকে। বরং, এই আঘাতই তাঁকে নতুন করে উদ্যম জুগিয়েছিল লড়াই করার। অবনী লেখারা। প্যারালিম্পিকের মঞ্চে এবার তাঁর হাত ধরেই সোনার ছোঁয়া পেল ভারত। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ২৪৯.৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করে এক কথায় ইতিহাস তৈরি করলেন ১৯ বছরের অবনী। উল্লেখ্য, প্যারালিম্পিকে এই প্রথমবার শ্যুটিং-এ কোনো পদক জিতল ভারত।
টোকিও প্যারালিম্পিকে ভারতের শুরুটা হয়েছিল বেশ মন্থর গতিতেই। প্রতিবছর জ্যাভলিনে যেখানে স্বর্ণপদক বাঁধা থাকে ভারতের নামে। সেই জায়গাতেই এবছর খানিক পিছিয়ে পড়েছিল তেরঙা শিবির। প্রথমদিনেই ৬টি সুযোগেই বৈধ থ্রো করতে ব্যর্থ হন আরেক জ্যাভেলিন থ্রোয়ার রণজিৎ ভাটি। আজ পদক পেলেও রুপোতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় সোনাজয়ী জ্যাভেলিন তারকা দেবেন্দ্র ঝাঁঝারিয়াকে। তবে গতকাল থেকেই পুনরায় লড়াইতে ফিরেছিল ভারত। একদিনেই ভারতের ট্যালিতে যুক্ত হয় তিন-তিনটি পদক। তার মধ্যে দুটি রুপো এবং একটি ব্রোঞ্জ থাকলেও অধরা থেকে যায় সোনা। সেই শূন্যস্থানই ভরাট করে দিলেন রাজস্থানের তরুণী।
টোকিও অলিম্পিকের ক্ষেত্রে দেখতে গেলে, অনেক আশা জাগিয়েও এবছর ব্যর্থ হয়েছিল ভারতের শ্যুটিং এবং তীরন্দাজি শিবির। সেই আক্ষেপেই যেন প্রলেপ দিলেন অবনী লেখারা। আগামীতে তাঁর এই স্বর্ণজয় যে ভারতের সামগ্রিক ক্রীড়ামহলকে অনুপ্রেরণা যোগাবে তাতে সন্দেহ নেই কোনো। তবে অবনীর পথ চলা এখনও বাকি অনেকটাই। অবনীর বয়স সবেমাত্র ১৯ বছর। ফলত, প্যারালিম্পিক-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও যে আগামীতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে চলেছেন তিনি, তা আলাদা করে না বললেও চলে…
আরও পড়ুন
টোকিও-য় আফগানিস্তানের দুই খেলোয়াড়, প্যারালিম্পিক মঞ্চে রূপকথার জন্ম
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
টেবিল টেনিসে রুপো জয়, প্যারালিম্পিকে ইতিহাস ভারতীয় তরুণীর