এই মুহূর্তে ভারতে প্রতি বছর দশ লক্ষের বেশি ছেলে-মেয়ে অটিজমের শিকার। এই সকল সন্তানদের বাবা-মায়েরা খুবই দুশ্চিন্তায় থাকেন কারণ এদের বেড়ে ওঠা আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো নয়। বহু প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এদের বড় করে তুলতে হয়। এদের জন্য যে ট্রেনিং রয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাছাড়া রয়েছে প্রতিবেশীদের অবহেলা, বাঁকা মন্তব্য।
চব্বিশ বছর ধরে দেরাদুনের শাশ্বতী সিংহ কয়েকশো অটিস্টিক শিশুর মায়েদের প্রেরণা।
শাশ্বতীর প্রথম সন্তানের কিছু গুরুতর শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়েছিল। আইসিইউ-তে পনেরো দিন কাটায় শিশুটি। সুস্থ হলে তাকে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়। সেখানকার দূষণ তাকে পুনরায় অসুস্থ করে দেয়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে সে আবারও হাসপাতালে ভর্তি হয়। শুধু এখানেই শেষ নয়। চার বছর হলে ছেলেটির অতিরিক্ত জ্বর হয় এবং তার ফলে দুবার এপিলেপ্সি করতে হয়। স্বাভাবিক ভাবেই, তার শরীর এবং মস্তিষ্ক এত ধকল নিতে পারেনি। ছেলেটি ক্রমশ অটিজমের স্বীকার হয়। তার স্বাভাবিক ব্যবহার বদলে যেতে থাকে। এই অস্বাভাবিক ব্যবহারের ফলে স্কুল থেকে নালিশ আসতে শুরু করে। বিয়াল্লিশটি স্কুলে শাশ্বতী দেবী ছেলের জন্য ঘুরেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেউ ছেলেটিকে ভর্তি নেয়নি।
এরপর তিনি স্পেশাল এডুকেটরের পরামর্শে অটিজম পরীক্ষা করান। ততদিনে শাশ্বতী দ্বিতীয়বার মা হতে চলেছেন। জীবন বিজ্ঞানের এই শিক্ষিকা নিজের চাকরি ছেড়ে ছেলেকে বাড়িতেই পড়াতে শুরু করেন। এছাড়াও যাঁরা এই অসুখ সম্বন্ধে কম জানেন তাঁদের সচেতন করে একটি স্কুল শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে চালু হয় এই স্কুল। পরের এক বছরের মধ্যে আট থেকে বেড়ে বারোজন ছেলেমেয়ে হয় এই স্কুলে।
সরকার পক্ষ থেকে তিলকনগর কমিউনিটি সেন্টারকে স্কুলের জন্য স্থান দেওয়া হয়। তখন আশি জন পড়ুয়া। পড়াশোনার পাশাপাশি এদের ডায়েট, দেখভাল করার জন্য উপায়, সবটাই শাশ্বতী দেবী একা করেন।
অবশেষে চালু হয় দেরাদুনে 'নব প্রেরণা ফাউন্ডেশন'। অটিস্টিক বাচ্চাদের নিয়ে এভাবেই লড়াই শুরু শাশ্বতী দেবীর। তাঁর ছেলের বয়স এখন একত্রিশ। তবে তিনি এখন কেবল মাত্র দুই সন্তানের মা নন, তাঁর রয়েছে কয়েকশো সন্তান। আর প্রত্যেকের কাছেই তিনি এখন ঈশ্বর।