পাখির গানের কথা বললেই বাঙালির মনে আসবে কোকিলের কথা। ঠিক তেমনই গানের জন্যই বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ার রিজেন্ট হানিইটার। কিন্তু হঠাৎ যদি শোনেন তার গলা দিয়েই বেরিয়ে আসছে বেসুরো কর্কশ আওয়াজ! হ্যাঁ, রিজেন্ট হানিইটারের সঙ্গে এমনটাই ঘটেছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। সম্প্রতি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি ফর বায়োলজির প্রসিডিংস-এ প্রকাশিত হয়েছে সেই গবেষণাপত্র। পৃথিবীর অন্যতম বিপন্ন পাখিদের একটি গান গাইতেই ভুলে গিয়েছে।
বছরখানেক আগে গবেষণার শুরু কিন্তু রিজেন্ট হানিইটারের গান নিয়ে হয়নি। বরং গবেষকদের উদ্দেশ্য ছিল আর কতগুলি পাখি অবশিষ্ট আছে তাই খুঁজে বের করা। তবে শনাক্ত করার উপায় অবশ্যই তার গান। কিন্তু দীর্ঘদিন জঙ্গলে ঘুরেও রিজেন্ট হানিইটারের গান শুনতে পেলেন না গবেষকরা। সন্দেহ হয়েছিল তখনই। এরপর ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে তল্লাশি চালাতে দেখে যায়, ইতিমধ্যে বেশ কিছু রিজেন্ট হানিইটারের এলাকার উপর দিয়ে গিয়েছেন গবেষকরা। কিন্তু তাদের গান শুনতে পাননি। আর এই তথ্য থেকেই গবেষণার মোড় ঘুরে যায় পাখির গানের দিকে।
একসময় অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়াত রিজেন্ট হানিইটার। কিন্তু ক্রমশ আধুনিক মানুষের বসতিস্থাপন এবং শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সংখ্যাও কমেছে। এখন সব মিলিয়ে ৩০০টি রিজেন্ট হানিইটার আছে বলে জানাচ্ছেন সমীক্ষকরা। আর তাদের মোট বসতি এলাকা সমগ্র ইংল্যান্ডের ১০ গুণ। অর্থাৎ কোনো পাখির সঙ্গে কোনো পাখির দেখা প্রায় হয় না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ যেভাবে কথা বলতে শেখে, সেভাবেই গান শেখে পাখি। অর্থাৎ অন্য পাখির গানের অনুকরণ করে। কিন্তু যদি কোনো রিজেন্ট হানিইটার জন্ম থেকে আর কারোর মুখোমুখি না হয়, তাহলে তাদের নিজস্ব স্বর হারিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ঠিক সেটাই ঘটেছে। অন্য পাখিদের কর্কশ স্বর শুনে তাই আয়ত্ত করে নিচ্ছে রিজেন্ট হানিইটাররা। তবে এই বিপন্ন পাখির সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই ঘটনা অত্যন্ত মারাত্মক বলেই মত বিজ্ঞানীদের। বিশেষত, সঙ্গমকালে পুরুষ পাখিদের গান শুনেই আকৃষ্ট হন স্ত্রীরা। সেই গান হারিয়ে গেলে প্রজনন প্রক্রিয়াও বাধা পাবে। ফলে রিজেন্ট হানিইটারের অন্তিম সময় আরও এগিয়ে আসছে। কিন্তু এখনই সমস্ত আশা ত্যাগ করার কারণ নেই বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আর কিছু না হোক, তাদের গানের রেকর্ডিং তো আছে। সেই রেকর্ড শুনিয়েই কি গান শেখানো যাবে না পাখিদের?
আরও পড়ুন
চাঁদের বুকে ৬৭ লক্ষ প্রজাতির ‘স্পার্ম-ব্যাঙ্ক’!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মেরু-পরিবর্তনের কারণেই বিলুপ্ত বহু প্রজাতি, জানাচ্ছে গবেষণা