মানুষের জীবন এক দীর্ঘ যাত্রা। নানা বাঁকে জড়িয়ে থাকে কত গল্প। শুধু কি জীবন? মৃত্যুকেও তো অনেকে সেভাবেই দেখেছেন। তাঁদের কাছে প্রাণ চলে যাওয়ার পর মানুষ আরেকবার যাত্রী। তবে সে এক অনন্ত পথের পথিক। কেউ কেউ আবার ভেবেছেন, না লোকটা হয়ত একটু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে আছে। আবার ফিরে আসবে। মৃত্যু এভাবেই জন্ম দিয়েছে নানা কাহিনির, নানা গল্পের। কেউ মারা গেলে, আমরা হয় তাঁকে দাহ করি, নয়ত দাফন করি। কিন্তু প্রথা এখানেই থেমে যায়নি। তার রূপ যে অনেক! ভাবনাও যে প্রচুর!
প্রাচীন উপজাতিদের ইতিহাস ও প্রথার দিকে যদি একটু চোখ ফেরানো যায়, তাহলে নানা অদ্ভুত জিনিস হয়ত দেখতে পাওয়া যাবে। আমাদের কাছে অদ্ভুত; তাদের কাছে এটাই পবিত্র আচার। ঠিক যেমন পিরামিড। তবে মৃত্যুকে ঘিরে আরও নানান উপাচার ছড়িয়ে আছে পৃথিবীতে। নানা লোকাচারে সমৃদ্ধ সেইসব অধ্যায়। তবে একবার নজর ফেরানো যেতেই পারে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। এর দেশটিও একটা সময় দেখেছিল অনেক প্রাচীন নিয়মের। এখনও হয়তো লুকিয়ে লুকিয়ে হয় সেসব। তথাকথিত সভ্যতার মাঝে ওই ‘অসভ্য’দের এইরকম মৃত্যু-উদযাপন যে আধুনিক সমাজ ভালো চোখে নেবে না!
আজকের যে অস্ট্রেলিয়া দেখছেন, সেটা আগে এরকম ছিল না। সেখানকার আদিম উপজাতিরা আজ সংখ্যায় অনেক কমে গেছে। তাদের সমাজেই মৃত্যু উদযাপনের অদ্ভুত রীতি প্রচলিত ছিল। কেউ মারা গেলে, তাকে দাহও করত না, দাফনও করত না। একটা উঁচু জায়গা তৈরি করে সেখানে রেখে দেওয়া হত সেই দেহ। তারপর তার ওপর পাতা, গাছের ডাল দিয়ে আবরণ দিয়ে দেওয়া হত। ওভাবেই ফেলে রাখা হত। একসময় মৃতদেহে পচন ধরে। চামড়া, চুল, নখ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমস্ত কিছু শেষ হয়ে যায় ধীরে ধীরে। শুধু পড়ে থাকে হাড়।
তখন হাজির হয় অস্ট্রেলিয়ার ওই আদিবাসী মানুষরা। ওই হাড়গুলিকে নিয়ে লাল রং করা হয়; তারপর গুহার ভেতরে ফেলে রাখা হয়। আস্তে আস্তে সেগুলোও ধূলিসাৎ হয়ে যায়। অনেক সময় ওই হাড় সংগ্রহ করতে যখন যাওয়া হয়, তখন একটি যুবককেও সঙ্গে করে নেওয়া হয়। পচে গলে শেষ হয়ে যাওয়া ওই দেহ থেকে যে রস বেরোয়, সেটা দিয়ে ওই যুবকের দেহে একটি উল্কি এঁকে দেওয়া হয়। তাতে নাকি ওই মৃত ব্যক্তিটির যাবতীয় ভালো গুণ ওর মধ্যে চলে আসবে। কেউ কেউ আবার ওই মৃত ব্যক্তির নামও নিত না আর। তার ব্যক্তিগত সমস্ত কিছু নষ্ট করে দিত; যাতে ওর আত্মা আর ফেরত না আসে!