মাত্র তিন বছরে এক-তৃতীয়াংশ কমেছে কোয়ালাদের সংখ্যা, শঙ্কিত গবেষকরা

এক দশক আগের কথা। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসেই বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় নাম লিখিয়েছিল কোয়ালারা (Koala)। অস্ট্রেলিয়ার (Australia) ফেডেরাল ইপিবিসি আইন মেনে এই মার্সুপিয়াল প্রানীটির সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করেছিল অস্ট্রেলিয়ার বন্যপ্রাণ বিভাগ। তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল ক্রমাগত বনভূমি নিধন এবং প্রকৃতির রোষে সম্পূর্ণ বৃথা গেছে সেই কর্মসূচি। কেবলমাত্র বিগত তিন বছরেই অস্ট্রেলিয়ায় কোয়ালাদের সংখ্যা (Population Decrease) কমেছে প্রায় এক তৃতীয়াংশ। 

অস্ট্রেলিয়ার বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অস্ট্রেলিয়ান কোয়ালা ফাউন্ডেশন’-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে তেমনটাই। ২০১৮ সালে যেখানে অস্ট্রেলিয়ায় কোয়ালাদের সংখ্যা ছিল ৮০ হাজারেরও বেশি, বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজারেরও কম। পরিসংখ্যান বলছে, অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি অঙ্গ রাজ্যেই কমবেশি হ্রাস পেয়েছে কোয়ালাদের সংখ্যা। কেবলমাত্র নিউ সাউথ ওয়েলসেই কোয়ালাদের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৪১ শতাংশ। মাত্র তিন বছরের মধ্যে এই নাটকীয় জনসংখ্যা হ্রাসে রীতিমতো আশঙ্কিত গবেষকরা। 

কিন্তু আকস্মিক এই জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ কী? গবেষকরা জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এই পরিবর্তন চোখে পড়লেও, এর কারণ বেশ দীর্ঘমেয়াদি। বিগত এক দশক ধরেই অস্ট্রেলিয়ায় আশঙ্কাজনকভাবেই কমেছে বৃষ্টির পরিমাণ। ক্রমাগত খরা এবং উষ্ণতা বৃদ্ধিই কোয়ালাদের জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার মূল কারণ। মূলত, নদী তীরবর্তী নরম মাটিতেই বসবাস করে কোয়ালারা। খরার কারণে বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদীগুলি শুকিয়া যাওয়ায় এই অঞ্চলগুলিই আর বাসযোগ্য নেই কোয়ালাদের জন্য। সেইসঙ্গে পানীয় জলের সংকট এবং ক্রমবর্ধমান বৃক্ষচ্ছেদন তো রয়েইছে। 

তবে সাম্প্রতিক সময়ে কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছে বিগত দু’বছরের বিধ্বংসী দাবানল। প্রকৃতির ধ্বংসলীলায় ছাই হয়ে গিয়েছিল কোটি কোটি বন্যপ্রাণ। সেই রোষ থেকে রেহাই পায়নি কোয়ালারাও। সেই দাবানলই এক ধাক্কায় অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল কোয়ালাদের সংখ্যা। 

আরও পড়ুন
অগ্নিদগ্ধ জঙ্গল থেকে একাই উদ্ধার ১০০টি কোয়ালাকে, অনন্য নজির অস্ট্রেলিয়ার কুকুরের

দ্রুত সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এই ঘটনার পরিণতি যে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াবে, সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছেন গবেষকরা। উপযুক্ত সংরক্ষণ কর্মসূচি না নিলে কয়েক দশকের মধ্যেই সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে মার্সুপিয়াল প্রজাতিটির অস্তিত্ব। গত জুন মাসেই অস্ট্রেলিয়া সরকার বন্যপ্রাণ সংক্ষণের জন্য ঘোষণা করেছিল বিশেষ প্রকল্পের কথা। আগামী শুক্রবারই প্রকাশিত হতে চলেছে সেই ‘ন্যাশনাল রিকভারি প্ল্যান’-এর কর্মসূচি এবং বিস্তারিত রিপোর্ট। এখন দেখার চাঞ্চল্যকর এই পরিসংখ্যান হাতে পাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া সরকার কোয়ালাদের জন্য বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা…

আরও পড়ুন
কোয়ালাদের শুশ্রূষায় খোদ সেনাবাহিনী, দাবানলে বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়ার ছবি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জ্বলন্ত গাছের ডালে বসে কোয়ালা, অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রতটে ছবি আঁকলেন শিল্পী

More From Author See More