ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরলে ৫ বছরের কারাবাস, বিতর্কিত সিদ্ধান্ত মরিসন সরকারের

গোটা বিশ্বের মধ্যে এখন করোনাভাইরাসের হটস্পট ভারত। সমস্ত রেকর্ড ভেঙেই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে চার লক্ষ। করোনাভাইরাসের এই দ্বিতীয় তরঙ্গের বিপর্যয় এড়াতে এবার কঠিন পদক্ষেপ নিল অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয় নাগরিকদের তো বটেই, ভারতে অবস্থানরত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদেরও এবার দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করল অস্ট্রেলিয়া প্রশাসন। এমনকি জানিয়ে দেওয়া হল, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে হবে কারাদণ্ডও।

গত শুক্রবার এমনটাই ঘোষণা করলেন অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট। ইতিমধ্যেই লাগু করা হয়েছে নতুন এই আইন। কার্যত অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস এই প্রথমবারের জন্য নিষিদ্ধ হল দেশের নাগরিকদের প্রবেশ। বাতিল করা হয়েছে ভারতগামী সমস্ত বিমানও। তবে এরপরেও আইন অমান্যের চেষ্টা করা হলে ৬০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলারের জরিমানা গুনতে হবে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের। সঙ্গে ৫ বছরের কারাদণ্ডের সম্ভাবনা।

মহামারীর মোকাবিলায় এর আগেও তৎপরতার সঙ্গেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। বর্তমানে অন্যান্য দেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় করোনার প্রকোপ অনেকটাই কম। গোটা মার্চ মাসে সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ২৯ হাজার মানুষ। প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে হাজারেরও কম। তবে ভারত থেকে আগত যাত্রীদের মাধ্যমে করোনার ডবল ও ট্রিপল ভ্যারিয়েন্ট স্ট্রেনের সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত, জানাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসন।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শোরগোল পড়ে গেছে বিশ্বজুড়েই। উঠে এসেছে বর্ণবাদের অভিযোগ। ভারতীয় বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি হিসাবেই অনেকে চিহ্নিত করছেন বিষয়টিকে। কারণ, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে মহামারী ভয়ঙ্কর আকার নিলেও, নাগরিকদের অনুপ্রবেশকে ‘অপরাধ’-এর তকমা দেওয়া হয়নি। বরং জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা করা হয়েছিল তাঁদের ফেরানোর। 

আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ার কোভিড মোকাবিলায় অবদান ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানীরও

পাশাপাশি এই বিতর্ককে আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার অ্যাডাম জামপা এবং কেন রিচার্ডসনের প্রত্যাবর্তন। ভারতে অবস্থানরত এই দুই তারকাই সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন কাতার হয়ে। এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করেই প্রশাসনকে বিঁধেছে অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার কমিশনও। 

আরও পড়ুন
বয়স ১৭ হাজার বছর, আবিষ্কৃত অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম গুহাচিত্র

যদিও বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ মানতে নারাজ মরিসন সরকার। দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত, দাবি সিনেটের। ভারতে এই মুহূর্তে রয়েছেন প্রায় ৯ হাজার অস্ট্রেলিয় নাগরিক। যাঁদের মধ্যে ৬০০-র বেশি মানুষ ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে ভাইরাসে। তাঁদের সুরক্ষার কথাই বা কেন ভাবল না প্রশাসন, উঠছে সেই প্রশ্নই। পাশাপাশি, দেশে কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশনের ব্যবস্থা থাকলেও কেন প্রবেশকারীদের ‘শাস্তি’-র নির্দেশ দেওয়া হল, সেই জায়গাটাতেও রয়ে যাচ্ছে ধোঁয়াশা...

আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়া নয়, একসময় ‘নিউ হল্যান্ড’ নামেই পরিচিত ছিল দেশটি!

Powered by Froala Editor