গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের অন্যতম বিরল একটি প্রাণী রিভার-ডলফিন। বিগত ৩০ বছর ধরে ভারত এবং বাংলাদেশ দুদেশেই এই বিরল প্রাণীটিকে সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে। আর এর মধ্যেই লকডাউনের জেরে অনেক হারিয়ে যাওয়া প্রাণীরই দেখা মিলতে শুরু করেছে। সেই তালিকাতেই যুক্ত হল গাঙ্গেয় ডলফিনের নাম। গত রবিবার বাংলাদেশের হালদা নদীর ধারে দেখা মিলল একটি রিভার ডলফিনের। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রাণীটিকে পাওয়া গেল মৃত অবস্থায়। আর স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসছে চোরাশিকার এবং নৃশংসতার প্রশ্নও।
রবিবার হালদা নদীর ধারে ৬২ ইঞ্চি দীর্ঘ এই ডলফিনকে দেখতে পান রাজন নামের এক স্থানীয় ব্যক্তি। মাছ ধরার জন্য নদীতে যে জাল ফেলা হয়েছিল তাতেই ধরা পড়ে এই প্রাণীর মৃতদেহ। বাংলাদেশ নদী গবেষণা সংস্থার কথায়, লকডাউন পরবর্তী সময়ে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার নদী ডলফিনের মৃতদেহ পাওয়া গেল। আর এই দুই ঘটনার পিছনেই চোরাশিকারীদের ভূমিকা আছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
রবিবার হালদা নদীতে খুঁজে পাওয়া ডলফিনটির গলা থেকে লেজ পর্যন্ত গভীর কাটা দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এই স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে যে চর্বি ও তেলের স্তরটি থাকে, সেটাও আগেই বের করে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য দপ্তরের অধিকারীকরা। বাজারে এই চর্বির দাম প্রচুর। আর সেই লোভেই ডলফিন হত্যার ঘটনা ঘটছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ডলফিন শিকারের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর আইন বজায় থাকার কারণেই মৃত প্রাণীটিকে আবার নদীতেই ফেলে দিয়ে আসে অপরাধীরা।
প্রসঙ্গত, গত রবিবারেই পশ্চিমবঙ্গে একটি ঘটনায় দেখা যায় এই বিরল গাঙ্গেয় ডলফিনের উপর একদল মানুষের অমানবিক অত্যাচারের ছবি। গত এপ্রিল মাসে হুগলি নদীর বক্ষে এই বিরল প্রাণীটির ফিরে আসার কথা জানান পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ চৌধুরী। আর তার কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল এই ছবি। সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছু মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও, যাতে দেখা যায় নদীর থেকে তুলে আনা এই প্রাণীটির উপর অত্যাচার চালিয়ে একদল মানুষ শেষপর্যন্ত তাকে মেরে ফেলে। যদিও ভিডিওর ঘটনাটি ঠিক কোথায় ঘটেছে, সেবিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে হুগলি নদীর ধারেই কোথাও এই ঘটনা ঘটেছে, তাতে সন্দেহ নেই।
বিভিন্ন প্রাণীর উপর মানুষের নিষ্ঠুর ব্যবহারের ছবি প্রায়শই দেখা যায়। কখনো অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে, আবার কখনো নিছক বিনোদনের জন্য। এমনকি একটি প্রাণীকে প্রায় বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েও সেই নিষ্ঠুরতায় কোনো ছেদ পড়েনি। ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের তথ্য অনুযায়ী ভারত এবং বাংলাদেশের নদীবক্ষে এখনও সর্বমোট ১২০০ থেকে ১৮০০ গাঙ্গেয় ডলফিনের অস্তিত্ব আছে। এই প্রাণীদের যদি নিরাপত্তা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যায়, তাহলে হয়তো বদ্বীপ অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচার একটা সুযোগ খুঁজে পাবে। অন্যথায় প্রকৃতির এই ক্ষতির প্রভাব এসে পড়বে মানুষের উপরেও। তাই মানুষকেই সচেতন হতে হবে এক্ষেত্রে।