পেরিয়ে গেছে সাড়ে তিন দশক। তবুও মুছে ফেলা যায়নি তেজস্ক্রিয়তা। এখনও মানুষের বসবাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি চের্নোবিল। ১৯৮৬ সালের পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর, এই প্রথম কোনো বাণিজ্যিক পণ্যের উৎপাদন হল খোদ তেজস্ক্রিয় নগরীতে। চের্নোবিলের পরিত্যক্ত অঞ্চলেই তৈরি হল অ্যালকোহলজাত মাদক পানীয়। তবে বাজারে আসা হয়ে উঠল না সেই পানীয়ের। তার আগেই তা বাজেয়াপ্ত করলেন ইউক্রেনের আবগারি দপ্তরের আধিকারিকরা।
চের্নোবিলে উৎপাদিত এই পানীয়ের প্রথম ১৫০০ বোতলই রপ্তানির কথা ছিল যুক্তরাজ্যে। গত ১৯ মার্চ রপ্তানির আগে তা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছিল কিয়েভ প্রসিকিউটর অফিস। তাতে দেখা যায়, স্বল্পমাত্রায় হলেও এই পানীয়ের মধ্যে তেজস্ক্রিয়তা দিব্যি বিরাজমান। আর তার পরেই বাজেয়াপ্ত করা হয় এই পানীয়কে।
‘অ্যাটমিক’ নামক এই তেজস্ক্রিয় ভদকা তৈরির মূল কারিগর পোর্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও অধ্যাপক ডঃ জিম স্মিথ। চের্নোবিলের পরিত্যক্ত অঞ্চল এত বছর পর সত্যিই আবাদযোগ্য কিনা, তা নিয়েই তিনি দীর্ঘ গবেষণা চালিয়েছেন বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। লক্ষ্য ছিল, চের্নোবিলের তেজস্ক্রিয় মাটিতে দানাশস্যের চাষ। বিষয়টিকে যে রীতিমতো বাণিজ্যিক স্তরে নিয়ে গেছেন তিনি, তাতে সন্দেহ নেই কোনো।
কয়েক বছর আগেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘চের্নোবিল স্পিরিট কোম্পানি’। সেখানেই পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি শুরু হয় এই তেজস্ক্রিয় পানীয় ‘অ্যাটমিক’-এর। চের্নোবিলের নিষিদ্ধ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত নারোদিচি জেলায় উৎপাদিত আপেল দিয়েই বানানো হয় এই ‘আর্টিসানাল স্পিরিট’।
আরও পড়ুন
চের্নোবিলের তিন দশক আগেই ঘটেছিল বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক দুর্ঘটনা
গবেষক স্মিথের দাবি, ২০১৯ সালেই পরীক্ষামূলকভাবে তিনি তৈরি করে ফেলেছিলেন এই পানীয়। তবে তার তেজস্ক্রিয়তা ছিল বাজারে প্রাপ্ত অন্যান্য ভদকার মতোই। তিনি নিজেও এই পানীয় খেয়ে দেখেছেন বলে জানাচ্ছেন ডঃ স্মিথ। তবে গবেষকের এই দাবি মানতে নারাজ ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। জনস্বাস্থ্য’র কথা ভেবেই ‘অ্যাটমিক’-কে নিষিদ্ধ করার কথাই ভাবছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন
চের্নোবিল বিস্ফোরণের পরেও ছাড়েননি গ্রাম, আজও আক্ষেপ নেই ৯০ বছরের বৃদ্ধের
তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, ইউক্রেনের আবগারি দপ্তর বাজেয়াপ্ত করলেও, এই পানীয় নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন তোলেননি যুক্তরাজ্যের এক্সাইজ আধিকারিকেরা। এমনকি রপ্তানির আগেই সবুজ সংকেত দিয়েছিল ব্রিটেন। সেই জায়গাটাতেই থেকে যাচ্ছে ধোঁয়াশা। অন্যদিকে ইউক্রেন প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে কী করে রপ্তানির পথে এগিয়ে গেল তেজস্ক্রিয় পণ্য, প্রশ্ন থাকছে তা নিয়েও। তবে কে বা কোন সংস্থা চের্নোবিলে উৎপাদিত এই পণ্যের প্রথম অর্ডার দিয়েছিল, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি দু’তরফই…
আরও পড়ুন
এখনও কতটা তেজস্ক্রিয় চের্নোবিল? সন্ধান দেবে রোবট-কুকুর
Powered by Froala Editor