তীব্র পরিশ্রম আর দৃঢ়তাই হল সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি। আর এ-কথাই প্রমাণ করে দিয়েছেন ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০০-এ জন্মানো ভারতের উদীয়মান এই বাঁহাতি তারকা স্পিনার তথা অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অথর্ব অঙ্কোলেকর। মুম্বাইয়ের একজন বাস কন্ডাক্টরের ছেলে অথর্ব ২০১০-এ দশ বছর বয়েসে বাবাকে হারান। তখন থেকে মা বৈদেহী অঙ্কোলেকর তাঁকে একাই লালনপালন করেছেন।
বাঁহাতি স্পিনার অথর্ব এই মুহূর্তে মুম্বাইয়ের রিজভি কলেজ অফ আর্টস, সাইন্স অ্যান্ড কমার্স জুনিয়র কলেজে কমার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ২০১০-এ বাবা বিনোদ অঙ্কোলেকরকে হারানো অথর্বর জন্য এই বছরটি স্মরণীয় অন্য আরেকটি কারণে। এই বছরই অথর্ব একটি প্র্যাকটিস ম্যাচ চলাকালীন মাত্র ১০ বছর বয়সে শচিন তেন্ডুলকরকে আউট করে দিয়েছিলেন। শচিন এতটাই প্রভাবিত হন যে তিনি নিজের অটোগ্রাফ করা একজোড়া গ্লাভস অথর্বকে উপহার দেন। এখনও নিজের বাবাকে মনে পড়ে অথর্বের। বাবার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন,
“আমি নিজের বাবাকে এখন সবচেয়ে বেশি মনে করি। আমি যখনই ঘুমোতাম, আমার বাবা আমার পাশে আমার ব্যাট এনে রেখে দিতেন। যেমন যেমন আমি বেড়ে উঠতে থাকি আমার বাবা ধীরে ধীরে আমাকে হেলমেট, গ্লাভস উপহার হিসেবে দিতেন। আমার এখনো সবকিছু মনে আছে। আমি আরো কড়া পরিশ্রম করব, আর একদিন অবশ্যই টিম ইন্ডিয়ার হয়ে খেলব।”
বেস্ট কোম্পানিতে(বৃহৎ মুম্বাই ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট) চাকরি করা অর্থব-র বাবা মারা যাওয়ার পর, সেই কন্ডাক্টারের চাকরিটি পান বৈদেহী। বৈদেহী দেবীর ডিউটি মারোল বাস ডিপোতে। আর তিনি ১৮৬ নম্বর বাস (আগরকর চৌক থেকে বিহার লেক) আর ৩৪০ নম্বর বাস (ঘাটকোপার স্টেশন থেকে আগরকার চৌক)-এ কার্যরত। কন্ডাক্টরের চাকরি করেই অথর্ব-র পড়াশুনা তথা ক্রিকেটের খরচা চালান বৈদেহী দেবী। তাঁর কথায়,
“আমি বেস্ট কোম্পানির কর্মচারীদের আর আত্মীয়দের তরফ থেকে শুভেচ্ছা পাচ্ছি। আমি সত্যিই সবার কাছে কৃতজ্ঞ। এটা আমার জন্য গর্বের মুহূর্ত। আমার স্বামী বিনোদ বেস্ট কোম্পানিতে একজন কন্ডাক্টর ছিলেন আর পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। তাঁর মৃত্যু আমাকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল। আমি নিজের বন্ধুদের সাহায্যে বাড়িতে টিউশন পড়ানো শুরু করি। পরে আমি সৌভাগ্যবশত স্বামীর চাকরিটি পাই। আমি বেস্ট কোম্পানির প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ আমি নিজের ছেলের স্বপ্নকে পূরণ করতে চাই। আমি খেলার ব্যাপারে বেশিকিছু জানি না। সত্যি বলতে আমি বিশেষ কিছু করিনি। আমি কখনো ওর উপর চাপ দিইনি। ওকে শুধু যা ইচ্ছে করার স্বাধীনতা দিয়েছি। কিন্তু ও নিজের বাবার স্বপ্নকে পূরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়।”
অথর্ব ধারাবাহিকভাবেই ভারতের হয়ে প্রদর্শন করে চলেছেন। মূলত তার বোলিংয়ের সৌজন্যেই ভারত ২০১৯ এর অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়াকাপ ফাইনালে খেতাব জিতেছিল। এশিয়া কাপের ফাইনালে অর্থব ৫টি উইকেট নিয়ে ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানও রেখেছেন। এশিয়া কাপে তিনি মোট ১৫টি উইকেট নিয়েছিলেন। এখন বিশ্বকাপের ফাইনালেও তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে দল। দেখা যাক এশিয়া কাপের মতোই ভারতকে তিনি বিশ্বকাপও এনে দিতে পারেন কিনা।