শনিবার সকাল পর্যন্তও ছবিটা ছিল একইরকম। বিগত এক মাসের মতোই নিয়ম করেই রাস্তায় অবস্থান নিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। আয়োজিত হয়েছিল মিছিল। আর তারপরই অতর্কিতে তাঁদের ওপর নেমে এল বুলেটের বৃষ্টি। কোনো রকম সতর্কতা ছাড়াই। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেন আন্দোলনকারীরা। রক্তস্নাত হল মায়ানমারের রাজপথ। এক দিনেই গত শনিবার মারা গেলেন ১১৪ জন বার্মার নাগরিক। যা সাম্প্রতিক সময়ের নৃশংসতম গণহত্যা।
বিগত এক মাসেরও বেশি সময় ধরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে মায়ানমার। ক্রমাগত হয়ে চলেছে প্রতিবাদ, অবরোধ, আন্দোলন। রাষ্ট্রনেতা সু কি-র মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। চলছে রাবার বুলেট, জলকামান, রাসায়নিক এমনকি লাইভ রাউন্ডও। গত দু-সপ্তাহ ধরে বিক্ষিপ্তভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে মায়ানমার জুড়ে। শনিবারের গণহত্যা যেন আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল জুন্টার নিষ্ঠুরতাকে। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা পেরিয়ে গেল ৪০০-র গণ্ডি।
শনিবারের এই ঘটনার একদিন আগেই মায়ানমার প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, আন্দোলনে অংশ নিলে সরাসরি মাথায় গুলি করা হবে। হ্যাঁ, এমনটাই প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছি জুন্টা। তবে তার যে এমন নৃশংস বাস্তবায়ন হবে, তা জানা ছিল না কারোরই। শনিবার শনিবার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও মিছিল চলাকালিন আচমকাই ঝলসে ওঠে সেনাবাহিনীর বন্দুক। এলোপাথারি গুলি চালাতে থেকে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। দৃশ্যটা একই ছিল মোট ৪৪টি শহরে। তবে নৃশংসতম সাক্ষী হয়েছে ইয়াঙ্গুন এবং মানডালায়। দুটি শহরেই মারা গিয়েছেন প্রায় ২০ জনেরও বেশি মানুষ। শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই নয়, মৃতের তালিকায় রয়েছে অসংখ্য নাবালক, নাবালিকাও।
ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য-সহ মোট ১২টি দেশ জুন্টার নিন্দা করেছে তীব্রভাবে। প্রতিবাদ করেছেন জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট অ্যান্টোনিও গুতেরেজ। এই ঘটনার বিরুদ্ধে যে আন্তর্জাতিক স্তরে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সে কথাই উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন
বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা, বিচ্ছিন্ন মায়ানমারের আন্দোলনকারীরা
অন্যদিকে শনিবার ছিল মায়ানমারের বার্মিজ ন্যাশনাল আর্মি’র ৭৬তম বিজয় দিবস। সেই উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল একটি সামরিক কুচকাওয়াজের। সেখানে অংশ নিয়েছিল ভারত, চিন, পাকিস্তান, বাংলাদেশে, রাশিয়া-সহ মোট ৮টি দেশ। অন্য দেশগুলি রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করলেও স্বয়ং হাজির হয়েছিলেন রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী। মায়ানমারে চলতে থাকে এই বর্বরতার প্রকাশের পরও কেন ভারত ও অন্যান্য দেশগুলি এই কুচকাওয়াজে অংশ নিল— তা নিয়েই উঠে আসছে বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়ে ভারতকে। ক্ষোভ উগড়ে দেন মায়ানমারের অবস্থানকারী।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের তরফে যে বিবৃতি ঘোষণা করা হয়, সেখানে অবশ্য সাক্ষর করেছে ভারত। তবে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে কোনো একক স্বতন্ত্র বিবৃতি জারি করা হয়নি। ভারতের এই নিষ্ক্রিয়তাই এখন প্রশ্নের মুখে। অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে জুন্টার সম্পর্ককেও ভালো চোখে দেখছে না আমেরিকা। মায়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা যে এখন শুধুই আর মায়ানমারের সীমান্তের মধ্যে সীমিত নেই, হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে তেমনটাই। তলায় তলায় পারদ চড়ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও। তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে এখন কীভাবে শান্তি ফিরে আসে, সেটাই দেখার…
আরও পড়ুন
ভারতে আশ্রয় নিলেন মায়ানমারের পুলিশ আধিকারিকরা
Powered by Froala Editor