মহিষাসুরের হত্যাকারীর মুখ আজও দর্শন করে না বাংলার অসুর পরিবারেরা

আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই গোটা বাংলা মেতে উঠবে দুর্গাপুজোর আনন্দে। কিন্তু এই উদযাপনের মাঝেও অন্ধকার থাকবে বাংলার মাদারিহাট অঞ্চলের কিছু ঘরে। না, অভাব নয়, একপ্রকার রাগের কারণেই এই উৎসব থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখেন তাঁরা। মাদারিহাটের এই অসুর পরিবাররা বিশ্বাস করেন, ছলনার সাহায্যে দুর্গা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিলেন তাঁদেরই পূর্বপুরুষ মহিষাসুরকে। তাই, সেই অন্যায়ের প্রতিবাদেই দুর্গোৎসব থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখেন।

আরও পড়ুন
পাকিস্তান আর আরবের দুর্গাপুজো, উর্দুতে লেখা চণ্ডীমন্ত্র

দীর্ঘ কয়েক প্রজন্ম ধরে মাদারিহাটে বসবাস করছেন এই ছয়টি অসুর পরিবার। শুধু মাদারিহাটই নয়, পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের আরও কিছু অঞ্চলে দেখা যায় এঁদের। শরতের এই সময় যখন সমস্ত জায়গা আলোয় ভরে ওঠে, তখন এই অসুরদের ঘরে ঘিরে থাকে অন্ধকার। তাঁদের বক্তব্য, শুধুমাত্র অধিকার কায়েম করার জন্যই তাঁদের ‘পূর্বপুরুষ’ মহিষাসুরকে অন্যায়ভাবে মারা হয়। কিন্তু তাঁরাই তো এখানকার প্রকৃত ভূমিপুত্র ছিলেন। সেখানে অন্যায্যভাবে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। তাই তাঁদের কাছে দুর্গা কোনও ভগবান নয়, বরং রাগের কারণ, অপমানের কারণ। অন্যান্য সমস্ত পুজোয় অংশ নিলেও, এই পুজোয় তাঁরা আসেন না। শুধু দুর্গা নয়, মহিষাসুরকে বধ করতে যে দেবতারা দুর্গাকে অস্ত্র দিয়েছিলেন, তাঁরাও পূজিত হন না। তাঁদের মুখও দর্শন করেন না মাতলু অসুর, মাহাতো অসুররা।

কিন্তু সময় বদলাচ্ছে। বাড়ির বড়রা না বের হলেও, খুদে সদস্যরা পুজোর কটাদিন বাইরে বেরোয়। দলবেঁধে মণ্ডপে, মেলায় যায় তারা। আনন্দ করে। বাড়ির বড়রা তাতে আর বাধা দেন না। কারণ, দুর্গাপুজো তো শুধু নিছক পুজো নয়। চার-পাঁচটা দিন সব পেয়েছির আসরে চলে যাওয়ার পাসওয়ার্ড। সেই আনন্দের জন্যই ছোটরা বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু বাড়ির বাকি সদস্যরা এখনও মুখ ফিরিয়ে আছে পুজো থেকে। পূর্বপুরুষের সম্মানহানির যন্ত্রণা গায়ে মেখে।