রাতের অন্ধকার আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে আরও দূর নক্ষত্র ও ছায়াপথে ঘেরা আমাদের ব্রহ্মাণ্ড। অথচ তার জন্ম হয়েছিল একটি অতি ক্ষুদ্র বিন্দু থেকে। আনুমানিক ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে প্রথম মহাজাগতিক বিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং থেকে যে পথচলা শুরু। তারপর অসংখ্য নক্ষত্র জন্মেছে, আবার মুছেও গিয়েছে। মহাকাশের বুকে জীবাশ্ম নেই। তাই যা হারায় তা একেবারেই হারিয়ে যায়। শুধু পুরনো নক্ষত্র থেকে অণু-পরমাণু নিয়ে গড়ে ওঠে নতুন নক্ষত্র। আর সেখানেই তাকে সৃষ্টির প্রথম দিনের ছাপ।
এইসব ছাপ পরীক্ষা করতে করতেই বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন এক অতি প্রাচীন নক্ষত্র। মহাবিশ্বের দ্বিতীয় প্রজন্মের নক্ষত্রগুলিরও একেবারে প্রথম দিকের এটি। নাম এসএমএসএস জে১৬০৫৪০.১৮-১৪৪৩২৩.১। আমাদের ছায়াপথ আকাশগঙ্গার বুকেই সন্ধান পাওয়া গিয়েছে এই অতি প্রাচীন নক্ষত্রের। পৃথিবী থেকে দূরত্ব আনুমানিক ৩৫০০০ আলোকবর্ষ। অবশ্য গতবছর বিজ্ঞানীরা যখন এই নক্ষত্রটি শনাক্ত করেন, তখনই তার মধ্যে হাইড্রোজেনের সঞ্চয় প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। আর কিছুদিনের মধ্যেই এই নক্ষত্রটির অস্তিত্বও হারিয়ে যাবে। বিজ্ঞানীদের হাতে এখন তাই সময় বিশেষ নেই বললেও চলে। যত দ্রুত সম্ভব এই নক্ষত্রের বিষয়ে সমস্ত তথ্য জোগাড় করতে হবে।
এক বছরের নানা পরীক্ষানিরীক্ষার পর এই নক্ষত্রটি সম্মন্ধে বেশ কিছু তথ্য জোগাড় করেছেন রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই নক্ষত্রের মধ্যে লোহার পরিমাণ খুবই কম। সূর্যের বুকে যে পরিমাণ লোহা আছে তার ১.৫ মিলিয়ন ভাগের একভাগ মাত্র। অন্যান্য ধাতুও নেই বললেই চলে। বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সৃষ্টির গোড়াতে কোনোরকম ধাতুর অস্তিত্ব ছিল না। হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মতো ছোটো পরমাণুগুলির সংযোগের ফলে বিভিন্ন ধাতু ও বড়ো ধরনের পরমাণু গড়ে উঠেছে। তাই যে নক্ষত্রের মধ্যে ধাতুর পরিমাণ যত কম, তার বয়স তত বেশি বলে অনুমান করা যায়। এর আগে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মহাকাশের প্রাচীনতম নক্ষত্রের মধ্যে লোহার পরিমাণ ছিল সূর্যের ১১০০০ ভাগের একভাগ। আর এক্ষেত্রে সেই পরিমাণ তার থেকেও অনেক কম। তাই নক্ষত্রটি যে বাকিদের চেয়ে অনেকটাই প্রাচীন, সে-বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
ব্রহ্মাণ্ড তৈরির পর প্রথম যে নক্ষত্রগুলি সৃষ্টি হয়েছিল, তার মধ্যে কোনো ধাতুর অস্তিত্ব ছিল না। এদের বলা হয় পপুলেশন-৩ নক্ষত্র। তবে তেমন কোনো নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন না বিজ্ঞানীরা। দ্বিতীয় প্রজন্মের নক্ষত্রের হদিশ পাবেন, এমন আশাও ছিল না বিজ্ঞানীদের। কিন্তু ঘটনাচক্রে তেমনই একটি নক্ষত্রের খোঁজ পাওয়া গেল। অতএব এর থেকে ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাসের আরও কত অজানা তথ্য জানা যায়, সেদিকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন বিজ্ঞানীরা।
Powered by Froala Editor