দেড় কিলোমিটার গুহাজুড়ে হাড়ের বিছানা! সাক্ষাৎ নরকের সন্ধান সৌদি আরবে

মরুভূমির মাঝে আগ্নেয়শিলায় তৈরি বিশাল একটি গুহা। গুহা না বলে তাকে প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ বলাই চলে। এই সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়লে মনে হবে যেন এসে হাজির হয়েছেন সাক্ষাৎ নরকে। কারণ, দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সেই গুহাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র হাড়। উট, ঘোড়া, ইঁদুর, ভেড়া ও অন্যান্য গবাধি পশুর দেহাংশের সঙ্গে সেখানে রয়েছে নরকঙ্কালও!

সম্প্রতি উত্তর-পশ্চিম সৌদি আরবের উম জিরসান গুহায় সন্ধান মিলল এমনই বিস্ময়কর এক গুহার। যা এক অর্থে মৃত্যুপুরীই বটে। সৌদি আরবের প্রাচীন ইতিহাসের সন্ধান করতে গিয়েই এই গুহার অস্তিত্ব খুঁজে পেলেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের প্রত্নতাত্বিক ম্যাথিউ স্টুয়ার্ট। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই নির্জন জনমানবহীন গুহায় কে তৈরি করল এমন রহস্যজনক হাড়ের বিছানা? 

প্রত্নতাত্ত্বিকদের তদন্ত বলছে এই কর্মকাণ্ডের পিছনে কোনো প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী কিংবা মানুষ নয়, বরং দায়ী হায়না। হ্যাঁ, উত্তর-পশ্চিম সৌদি আরবে দীর্ঘ সময় ধরেই বসবাস করত স্ট্রাইপড হায়নারা। আর তারাই তৈরি করেছিল এই কঙ্কালের সংগ্রহ! গুহায় প্রাপ্ত ১৯১৭টি হাড়ের নমুনা পরীক্ষা করার পর উঠে আসছে তেমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংগৃহীত হাড়গুলিতে যে দাঁতের দাগ রয়েছে তা হুবহু মিলে যাচ্ছে স্ট্রাইপড হায়নার দন্তসজ্জার সঙ্গে।

কথায় আছে, শিকারের পর হাড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট রাখে না হায়নারা। নিজেদের থেকে আকারে বড়ো যে কোনো প্রাণীরই শিকার করে থাকে হায়না। এমনকি দলগত প্রচেষ্টায় বনের রাজা সিংহেরও মৃত্যুদূত হয়ে দাঁড়ায় এই ক্যানাইন প্রজাতিটি। তবে শুধুমাত্র খিদের জন্যই শিকার করে না হায়না। ভক্ষণের পর শিকারের হাড় সংগ্রহ করা সহজাত প্রবৃত্তি তাদের। তবে আরবের মরু প্রান্তরে আবহাওয়ার জন্য যে কোনো জিনিসের সংরক্ষণই বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। সে জন্যই এই নাতিশীতোষ্ণ এই গুহাকেই ‘সংরক্ষণাগার’ হিসাবে বেছে নিয়েছিল হায়নারা। 

আরও পড়ুন
যিশুর ক্রুশের পেরেক আবিষ্কার জেরুজালেমে, লেগে রয়েছে হাড়ের গুঁড়োও!

সৌদি আরবের এই গুহা থেকে প্রাপ্ত হাড়ের কার্বন ডেটিং জানাচ্ছে, সেগুলির বয়স ৪৫০ থেকে ৭ হাজার বছর পর্যন্ত। বিগত ২০ জুলাই ‘আর্কিওলজিক্যাল অ্যান্ড অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল সায়েন্সেস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এই গবেষণার চূড়ান্ত ফলাফল। তবে এই প্রথম নয়। এর আগে চেক প্রজাতন্ত্রেও ক্লাব কোমিন ১৯৪২ সালে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এমনই একটি কঙ্কালের নরককুণ্ড। মিলেছিল সাড়ে তিন হাজার প্রাণীর কঙ্কালের অস্থি। আর সেই সংগ্রহের পিছনেও অবদান ছিল হিংস্র হায়নাদেরই…

আরও পড়ুন
৩০ হাজার মানুষের হাড় দিয়ে সাজানো গির্জা, দরজা থেকে ঝুলছে নৃমুণ্ড!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মানুষের হাড় দিয়েই তাক-লাগানো ভেল্কি, কলকাতা ভুলেছে মাদারি জাদুকর রহমতুল্লাকেও