বহনযোগ্য মেজি ও ভেলাঘর, ঐতিহ্য বাঁচাতে উদ্যোগ গুয়াহাটির ব্যক্তির

শীতের শেষে চাষের জমি থেকে ফসল তুলে নেওয়ার পর পড়ে থাকে শুকনো খড়। সেই শুকনো খড় আর বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরি হচ্ছে দেখলেই অসমের মানুষ বুঝে যেতেন, এবার বিহু পরব আসছে। মাঘ বিহু। কয়েক দশক আগেও এই ঘরগুলো ছিল বিহু উৎসবের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যাকে অসমের মানুষ চেনেন মেজি এবং ভেলাঘর নামে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যায় অনেক সংস্কৃতিই। মেজি এবং ভেলাঘরের ঐতিহ্যও হারিয়ে যাচ্ছিল। অন্তত গুয়াহাটি শহরে। ঠিক এই সময় এগিয়ে এলেন বাবুল চেটিয়া (Babul Chetia)। ঐতিহ্যের (Tradition) সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন আধুনিকতাও। সবার বাড়িতে হয়তো মেজি (Meiji) এবং ভেলাঘর তৈরি সম্ভব নয়। তাঁদের জন্য বহনযোগ্য ঘর তৈরি করে বিক্রি করছেন বাবুল।

শিবসাগরের দিমাও গ্রামে জন্ম বাবুলের। তবে জন্মের কিছু পরেই পরিবারের সঙ্গে চলে এসেছিলেন গুয়াহাটি শহরে। ছোটো থেকেই নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত তিনি। তবে সেই সত্তরের দশকে তখনও গুয়াহাটি শহরে মেজি আর ভেলাঘর তৈরির রেওয়াজ ছিল পুরোদমে। সেইসব দেখেই বড়ো হয়েছেন বাবুল। অবশ্য এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে যে এক সময় লড়াই করতে হবে, সেটা ভাবেননি। পড়াশোনায় তেমন মন বসত না বাবুলের। বরং শরীরচর্চার দিকেই আগ্রহ ছিল বেশি। ১৯৮৯ সালে মিস্টার অসম শিরোপাও পান তিনি। এরপর জিম প্রশিক্ষণকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন।

কিন্তু এর মধ্যেই একটু একটু করে বদলে যাচ্ছিল ছবিটা। অসমের মানুষ নিজেদের সংস্কৃতি থেকে ক্রমশ দূরে সরে যেতে শুরু করলেন। আর এর মধ্যেই এসে পড়ল করোনা অতিমারী। জিমখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকটা বাড়তি সময় পেলেন বাবুল। আর তখনই ভাবতে শুরু করলেন, কীভাবে এই সংস্কৃতিকে বাঁচানো যায়। নিজেই ভেবে বের করলেন বহনযোগ্য মেজি ও ভেলাঘর তৈরির কৌশল। তারপর গত বছর থেকেই সেই পসরা সাজিয়ে বসেছেন। অবশ্য গতবছর অতিমারীর কারণে মাঘ বিহু উদযাপনের উপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই অনেক বাড়িতেই উৎসব পালন হয়নি। এবছর এখনও তেমন বিধিনিষেধ নেই। আগুনের দেবতার কাছে ফসলের অবশিষ্টাংশ সমর্পনের এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বাবুলের এই উদ্যোগ রীতিমতো প্রশংসার দাবি রাখে।

Powered by Froala Editor

More From Author See More