গত বছর মে-জুন মাসে ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল ব্রহ্মপুত্র। ভাসিয়েছিল উপকূল সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা। শুধু জনবসতিই নয়, ব্রহ্মপুত্রের প্লাবনের শিকার হয়েছিল বন্যপ্রাণীরাও। এবার বছর ঘুরতে ঘুরতেই আবার একইরকম পরিস্থিতি তৈরি হল আসামে (Assam)। ভারী বৃষ্টি, বন্যা (Flood) এবং ভূমিধ্বসে জর্জরিত আসামের একাধিক জেলা। স্থানীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই বন্যা পরিস্থিতির কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ ব্যক্তি।
কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে একটু একটু বাড়ছিল ব্রহ্মপুত্রের জলস্তর। পাশাপাশি আসামের একাধিক নদীর জলস্তরও বিপদসীমা পেরিয়েছে অনবরত বৃষ্টির জেরে। ফলস্বরূপ, কাছাড়, হাফলং, দিমা হাসাও, নগাঁও-সহ একাধিক জেলা তলিয়েছে জলের তলায়। অসমের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর রিপোর্ট অনুযায়ী, সবমিলিয়ে ২২৫টি গ্রাম বন্যার শিকার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৫৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। ভেসে গেছে ২০০টিরও বেশি বাড়ি। ভূমিধ্বসে হাফলং ও কাছাড় জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। অন্যদিকে দিমা হাসাও জেলায় এক কিশোর-সহ নিখোঁজ ৩ জন। আশঙ্কা, আরও বাড়তে পারে মৃত্যুর সংখ্যা।
জনবসতির পাশাপাশি আসামের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত কৃষি ব্যবস্থা। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে জলের তলায়। ফলে, বড়োসড় ক্ষতির প্রমাদ গুনছেন কৃষকরা। চাষের জমিতে নোনাজল ঢোকায় জমির উর্বরতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে ক্রমশ।
আসমের বন্যা পরিস্থিতি প্রভাবিত করেছে যোগাযোগ মাধ্যমকেও। ধ্বসের জেরে একাধিক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেললাইন। বাতিল করা হয়েছে ১২৫টি ট্রেন। গতকাল নিউ হাফলং-এ ভূমিধ্বসের শিকার হয় একটি যাত্রীবাহী এক্সপ্রেস ট্রেন। জলের তোড়ে লাইন সরে যাওয়ায় গতিরুদ্ধ অবস্থায় আটকে ছিল ট্রেনটি। আটকা পড়েছিলেন প্রায় ২৮০০ মানুষ। পরে বায়ুসেনার কপ্টার এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে উদ্ধার করা হয় তাঁদের। রেলপথের পাশাপাশি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে আসামের বেশ কিছু রাস্তাও।
চলতি মরশুমে এই প্রথম বন্যার শিকার হল উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যটি। এখন সবে গ্রীষ্ম। বর্ষায় আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি— সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা…
Powered by Froala Editor