শীতের রেশ কাটতে না কাটতেই আবার এসে হাজির দাবানলের ‘মরশুম’। একদিকে যখন পশ্চিমবঙ্গে দাউ দাউ করে জ্বলছে শুশুনিয়া, অযোধ্যা; তখন অন্যদিকে প্রতিবেশী ওড়িশাতেও দগ্ধ সিমলিপাল রিজার্ভ ফরেস্ট। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে প্রতিবছরেই ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী থাকে সিমলিপাল। তবে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা এমন বড় মাপের দাবানল শেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৫ সালে। কিন্তু কারণ কি এই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের?
না, শুধু শুষ্ক আবহাওয়া কিংবা জলবায়ু পরিবর্তন নয়। গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কম ছিল ঠিকই, তবে এই অগ্নিকাণ্ডে মূল ঘৃতাহুতি দিয়েছে মানুষের কর্মকাণ্ডই। কেমন ভাবে? সিমলিপাল অঞ্চলে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে কাজ করে আসা সংরক্ষণকর্মী ভানুমিত্র আচার্যের কথায়, চোরাশিকারীরা প্রায়শই আগুন লাগিয়ে থাকেন অরণ্যে। মূলত বন্যপ্রাণীদের পালানোর সময় একদিকে চালিত করাই তার মূল উদ্দেশ্য।
তাছাড়াও স্থানীয় গ্রামবাসীরা অনেকেই যুক্ত মহুয়ার মাদক তৈরিতে। তাঁরাই শুকনো পাতায় আগুন ধরিয়ে দেন। মাটি পরিষ্কার থাকলে মহুয়া ফুল সংগ্রহে সুবিধা হয় তাঁদের। সেখান থেকেও আগুন ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
পূর্বঘাট পর্বতমালায় অবস্থিত সিমলিপাল এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম বায়োস্ফিয়ার। রয়েছে ৯৪ প্রজাতির অর্কিড সহ ৩ হাজার প্রজাতির গাছ। সরীসৃপ, উভচর, পাখি, স্তন্যপায়ী মিলিয়ে সিমলিপালে পাওয়া যায় প্রায় পাঁচশোর কাছাকাছি প্রাণী প্রজাতি। এই ধরণের অগ্নিকাণ্ড যে সেই বিপুল জীববৈচিত্রের কাছে বিপদের, তা বলার অপেক্ষা থাকে না।
আরও পড়ুন
আবার আগুনের কবলে অযোধ্যা পাহাড়, সত্যিই কি প্রাকৃতিক কারণে?
সম মিলিয়ে সিমলিপাল অরণ্যে মোট ৩৯৯টি ফায়ার পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছিল। দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে অক্লান্ত লড়াইও চালিয়ে গেছেন দমকলকর্মীরা। গতকালের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গেছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে। তবে এখনও পুরোপুরি শান্ত হয়নি ধ্বংসলীলা। সিমলিপালের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মূলত বসবাস করেন বিভিন্ন প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। সেদিক থেকে কোনো হতাহতের খবর মেলেনি। কিন্তু এই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে ছাই হয়ে গেল অসংখ্য বন্যপ্রাণ। যে ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আবারও আগুনের গ্রাসে শুশুনিয়া, নতুন বছরেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পর্যটকদের মধ্যে