সম্মানজনক কাজ নেই; ড্রাগ পাচার চক্রে জড়িয়ে পড়ছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মহিলারা

আজ থেকে বছর দুয়েক আগের ঘটনা, নাইজেরিয়া থেকে হংকং বিমান বন্দরে ভিড়ল একটি বিমান। সেখান থেকে নামলেন ২১ বছরের যুবতী। ধরা যাক তাঁর নাম ইউনি। রুটিন মাফিক তাঁর সমস্ত মালপত্র চেকিং শুরু হল। ইউনি তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টাও করেননি। কারণ তিনি জানতেন না তাঁর জন্য কী অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু তাঁর ছোট্ট চামড়ার হ্যান্ডব্যাগ খুলতেই পাওয়া গেল ড্রাগ। ইউনিকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হল। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে চক্রের কারোর সন্ধানই পাওয়া গেল না। ইউনি তাঁদের সন্ধান জানলে তো দেবেন। এখন অবশ্য জেল থেকে ছাড়া পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন তিনি। আর তাই সম্পূর্ণ বাস্তব ঘটনার জন্যও কাল্পনিক একটি নামের আশ্রয় নিতে হল।

তবে এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পুলিশ রেকর্ড ঘাঁতলে এরকম অনেক রেকর্ড পাওয়া যাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে অপরাধী হিসাবে গ্রেপ্তার হচ্ছেন মহিলারাই। থাইল্যান্ডের মহিলা কয়েদিদের ৮৩ শতাংশই গ্রেপ্তার হয়েছেন ড্রাগ পাচারের অপরাধে। ফিলিপাইন্সের মোট কয়েদিদের ৫৩ শতাংশই মহিলা, আবার সেখানেও অধিকাংশের অপরাধ ড্রাগ পাচার। কিন্তু এখানে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কেন? কেন মহিলারাই বারবার ড্রাগ পাচারের অপরাধে গ্রেপ্তার হচ্ছেন?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় ইউনির অভিজ্ঞতা থেকেই। সংসারের আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে তাঁকে রোজগারের পথ দেখতেই হত। অথচ এখনও এই সমাজে একজন মহিলার পক্ষে সম্মানজনক কাজ পাওয়া বেশ কঠিন। এর মধ্যেই এক পরিচিত ব্যক্তি খবর দিলেন, একটা ট্রাভেল কোম্পানির কাজ আছে। তবে তার জন্য নানা জায়গায় ঘুরতে হবে। নানা দেশ ঘোরার ব্যাপারে তাঁর আপত্তির থেকে আগ্রহই ছিল বেশি। তাই কাজটায় যোগ দিলেন। আর প্রথম কাজ দেওয়া হল হংকং শহরে একটি কাপড়ের ব্যাগ পৌঁছে দেওয়া। তাঁকে বলা হয়েছিল, এর মধ্যে কিছু কাপড়ের স্যাম্পেল আছে। আর এর পরের ঘটনা আগেই বলা হয়েছে।

সম্প্রতি জাতিপুঞ্জের পক্ষ থেকেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, ড্রাগ পাচারের কাজে মহিলাদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছে। এখন করোনা পরিস্থিতিতে এমন ঘটনা বেশ কমে এলেও ২০২০ সালের শুরু পর্যন্ত এমন ঘটনা ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক। জাতিপুঞ্জ এর কারণ অনুসন্ধানে ব্যর্থ হলেও এইসব কয়েদিদের মধ্যে কাজ করা এনজিও কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট বক্তব্য, সমাজ-অর্থনৈতিক কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। অনেকে তাঁদের আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও করছেন। কিন্তু এখনও যে কত মহিলা সহজেই এমন চক্রের ফাঁদে পড়বেন, তার ধারণা পাওয়া মুশকিল। পরিস্থিতি বদলাতে গেলে মূল থেকেই বদলাতে হবে। সমস্ত ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদেরও সমান সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু সেই কাজ কি এত সহজে সম্ভব হবে?

আরও পড়ুন
এগিয়ে এলেন সুন্দরবনের মহিলারাই, পরিবেশ দিবসে রোপণ করলেন ৫০০০ ম্যানগ্রোভ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
লকডাউনের মধ্যেই চলছে পাচার, মেক্সিকোয় উদ্ধার ১৫০০ বিরল প্রজাতির কাছিম

More From Author See More