গায়ে উজ্জ্বল কমলা বর্ণের ইউনিফর্ম। মাথায় কমলা টুপি। বুকে লাগানো বডি ক্যামেরা। হাতে হুইসল নিয়ে ক্রমাগত তাঁরা টহল দিচ্ছেন রাস্তায় রাস্তায়, অলিতে-গলিতে। ঠিক যেন অতন্দ্র প্রহরী। যুক্তরাষ্ট্রের ওকল্যান্ডের চায়না টাউনে গেলেই দেখতে পাওয়া যাবে এমন দৃশ্য। কিন্তু ব্যাপার কী? এই তৎপরতাই বা কীসের? আসলে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান জাতিগত হিংসা এবং বর্ণবিদ্বেষে ইতি টানতেই এমন উদ্যোগ তরুণ এশিয়-আমেরিকানদের।
গত বছরের কথা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, কোভিডের জন্য দায়ী মূলত এশিয়-আমেরিকানরাই। ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল তাঁরাই যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়েছে মহামারী। আর তারপর থেকেই জ্বলে উঠেছিল বর্ণবিদ্বেষে আগুন। অল্পদিনের মধ্যেই রীতিমতো ভয়াবহ রূপ নেয় সহিংসতা। বছর পেরিয়ে এসেও সেই পরিস্থিতি বদল হয়নি কিছু। এখনও পর্যন্ত বর্ণবাদী আক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। এমনকি হিংসার মুখে প্রাণও হারাতে হয়েছে কাউকে কাউকে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, মূলত বয়স্ক এবং মধ্যবয়সীরা এই হিংসার শিখার হয়েছেন সবথেকে বেশি।
এবার সেই সহিংসতার বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন এশিয় তরুণরা। না, হিংসার উত্তর হিংসা দিয়ে নয়। বরং, কোনোরকম অস্ত্র ছাড়াই নীতিগত আদর্শ বজায় রেখেই স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন তাঁরা। কিন্তু সেভাবে কি ঠেকানো সম্ভব এই হিংসার আগুন? সম্ভব। টহলের সময় তাঁদের শরীরে লাগানো বডি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে চলেছে আশেপাশের সবকিছুই। আর হিংসার কোনো ঘটনা দেখলেই, স্বেচ্ছাসেবকরা প্রমাণ-সহ দ্বারস্থ হচ্ছেন মার্কিন প্রশাসনের কাছে। তাঁদের এই উদ্যোগে শুধু ওকল্যান্ডের চায়নাটাউনেই বিগত তিন মাসের ধরা পড়েছে প্রায় ২৬ জন অপরাধী। তবে কেবল ওকল্যান্ড না, নিউ ইয়র্ক, সিয়াটল-সহ একাধিক মার্কিন শহরেই স্বেচ্ছাসেবকের কাজের জন্য এগিয়ে আসছেন তরুণ তুর্কিরা। প্রতিটা শহরেই গড়ে উঠেছে কয়েক ডজন স্বেচ্ছাসেবকের সম্পূর্ণ বাহিনী। তাঁরা কেউ আইটি কর্মী, কেউ ওয়েটার, কেউ আবার শিক্ষার্থী কিংবা গাড়িচালক।
তবে, এই টহলের পাশাপাশি জো বাইডেনের স্বাক্ষরিত নতুন এশিয় সুরক্ষা আইনও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে সমাজে। সরকারের কড়া পদক্ষেপে বর্তমানে ধীর গতিতে হলেও কমছে হিংসার মাত্রা। অন্যদিকে উপরাষ্ট্রপতি ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসও এশিয়-আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রশাসনিক নিরাপত্তা যাতে আরও দৃঢ় করা হয়, সেই প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। এখন দেখার এই তৎপরতায় কত দ্রুত প্রাক-মহামারী যুগে ফিরতে পারে এশিয়-মার্কিনিদের স্বাভাবিক যাপনচিত্র…
আরও পড়ুন
অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গে বিপর্যস্ত সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া, আশঙ্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একজোট এশিয়-আমেরিকান শিল্পীরা, চলছে সচেতনতামূলক প্রচার