Powered by Froala Editor
বর্ণময় ক্রিকেট কেরিয়ারে ইতি, অবসর নিলেন বাংলার ‘নৈছনপুর এক্সপ্রেস’
১/৮
দৌড়টা শুরু হয়েছিল মেদিনীপুরের তমলুকের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম থেকে। মুখোমুখি হতে হয়েছে একাধিক প্রতিকূলতার। তবু পরিশ্রম আর একাগ্রতাকে অস্ত্র করেই বাড়িয়ে তুলেছিলেন উইকেট-খিদে। জায়গা করে নিয়েছিলেন ঘরোয়া তথা আন্তর্জাতিক স্তরের ক্রিকেটে। অবশেষে থামলেন নৈছনপুর এক্সপ্রেস। মঙ্গলবার সাংবাদিন সম্মেলনেই সমস্ত ফর্ম্যাটের ক্রিকেট থেকে অবসরগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন অশোক দিন্দা।
২/৮
গত মরশুমেই ক্রিকেট রাজনীতির শিকার হওয়ার কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন অশোক দিন্দা। ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বাংলার বোলিং কোচ রণদেব বসু এবং সামগ্রিক কোচ অরুণলালের বিরুদ্ধে। গত মরশুমে বাংলায় না খেলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গোয়ার হয়ে খেলার। তবে অবসরগ্রহণের সময় জীবনের সেরা বোলিং-পার্টনার হিসাবে রণদেব বসুর নামই বেছে নিলেন নৈছনপুর এক্সপ্রেস।
৩/৮
সদ্য সমাপ্ত সৈয়দ মুস্তাক আলি টুর্নামেন্টে গোয়ার হয়েই খেলেন অশোক দিন্দা। ৫টির মধ্যে মাত্র ৩টিতে জয় তুলে আনলেও নক-আউট পর্বে পৌঁছতে পারেনি গোয়ার দল। ২ দিন আগেই সব শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা। আর তারপরই নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন দিন্দা। ৩৭ বছর বয়সে বোলিংয়ের জন্য সেইভাবে সায় দিচ্ছে না শরীর, এমনটাই জানালেন তিনি।
৪/৮
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের জার্সিতে তাঁর অভিষেক ২০০৯ সালে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই নিয়েছিলেন জয়সূর্যের উইকেট। পরের বছর খেলেন ওয়ান ডে-ও। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৯টি ম্যাচে ১৭টি উইকেট এবং ওয়ান-ডেতে ১৩ ম্যাচে ১২ উইকেট শিকার করেছেন দিন্দা।
৫/৮
আইপিএলে কলকাতা ছাড়াও খেলেছেন দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, পুনে ওয়ারিওরস এবং ব্যাঙ্গালোরের হয়ে। ৭৮ ম্যাচে সংগ্রহ করেছেন ৬৯টি উইকেট। আর ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর পারফর্মেন্স এককথায় আকাশছোঁয়াই। রঞ্জিতে ৩৩৬টি উইকেট নিয়ে সর্বকালীন রেকর্ডে নিজের নাম লিখিয়েছেন দিন্দা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট-টেকার রণদেব বসুর শিকারও যেখানে ২১৮। সব মিলিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ৪২০টি উইকেট নিয়েছেন দিন্দা।
৬/৮
তবে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম পেসারকেও শিকার হতে হয়েছে ট্রোলিং-এর। আইপিএলে খারাপ ইকোনমির জন্য ক্রমাগত হাসি-ঠাট্টা চলেছিল অশোক দিন্দাকে নিয়ে। কোনো বোলারের খারাপ পারফর্মেন্সের পরেই সেখানে জুড়ে দেওয়া হত কাল্পনিক ‘দিন্দা অ্যাকাডেমি’-র নাম। আধুনিক সংক্ষিপ্ত ওভারের ক্রিকেটের যে মাদকতা নোংরা ব্যক্তিগত আক্রমণের জায়গায় চলে গিয়েছিল, তার থেকে বাদ ছিল না ব্যাঙ্গালোর ক্রিকেট টিমও। তাঁদের অফিসিয়াল পেজ থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল করা হয় অশোক দিন্দাকে।
৭/৮
কিন্তু এই মানসিকতাই যে ক্রিকেটের আসল মেজাজ নয়, তারই প্রমাণ স্বয়ং দিন্দা। এক রূপকথা উত্থান বলতে যা বোঝায় ক্রিকেটের দুনিয়ায় তাঁর এসে পড়া সেভাবেই। ক্রিকেটের স্বপ্ন দেখেই মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম নৈছনপুর থেকে তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। প্রতিদিন প্রায় ৮ ঘণ্টার যাতায়াতের ধকল বয়েও ঘাম ঝরিয়েছেন বাইশ গজে। টালিগঞ্জের ক্লাবে প্র্যাকটিসের সময় ক্রিকেট সাধনার জন্য বাড়ির টান ত্যাগ করে দীর্ঘদিন থেকেছেন কোচ অটল দেববর্মনের বাড়িতে।
৮/৮
অবসরগ্রহণের সময় তাঁর সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী। স্মৃতিচারণায় দিন্দা এদিন তুলে আনেন পুরনো মুহূর্তদের। ধন্যবাদ জানান প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেও। তবে যে দিন্দাকে খেলার সময় যোগ্য সম্মান দিতে পারেনি বোর্ড, অবসরগ্রহণের দিনই যেন কদর বেড়ে গেল তাঁর। সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া এদিন বাংলার তরুণ ট্যালেন্টদের তুলে আনার জন্য দায়িত্ব দিতে চান অশোক দিন্দাকে। তবে এখনও পর্যন্ত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে কিছু জানাননি তিনি। আপাতত পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটাতে চান বাংলার নৈছনপুর এক্সপ্রেস…