ইন্দোনেশিয়ার (Indonesia) রাজধানী জাকার্তা শহর। সেখান থেকে ২৮৫ মাইল পূর্বে টিমবাসলোকো গ্রাম। এখনও মানচিত্র দেখলে দেখা যায়, ঠিক সমুদ্রের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই গ্রাম। তবে সেই মানচিত্র তো কবেই বদলে গিয়েছে। গ্রামের সীমানায় গিয়ে দাঁড়ালে এখন চোখে পড়ে শুধুই সমুদ্র। তার গ্রাসে চলে গিয়েছে সবকিছুই। এমনকি ইতিহাসের একমাত্র শিকড় গ্রামের কবরস্থানও। মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু মৃতদেহদের কি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে? টিমবাসলোকো (Timbulsloko) গ্রামে এখন এটাই সবচেয়ে বড়ো চিন্তার বিষয়।
কিছুদিন আগেও দৃশ্যটা একেবারেই এমন ছিল না। গ্রামের বহু মানুষের স্মৃতিতে এখনও সেইসব দিনের ছবি ভেসে ওঠে। তখন যতদূর চোখ যেত, দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ধানক্ষেত। শুধু ধানই নয়। সারা বছর নানা ফলমূল, শাকসব্জির চাষ লেগেই থাকত। আর ছিল উঁচু উঁচু তাল আর নারকেলের গাছ। প্রথম আঘাতটা এল ১৯৯০ সালে। হঠাৎই দেখা যায়, সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হলুদ আর কালো পোকায় ভরে গিয়েছে ক্ষেত। গ্রামবাসীরা বুঝলেন, যেভাবে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকছে তাতে আর কৃষিকাজ সম্ভব হবে না। কৃষিকাজের বদলে মাছ চাষ বেছে নিলেন তাঁরা। তবে সেটাও বছর দশেকের বেশি চলল না। ২০০০ সালের মাঝামাঝি সমস্ত খাঁড়িগুলোই জোয়ারের জলে ভেসে গেল। আর এখন বাড়িগুলিও জলের তলায়। তার উপরেই কোনোরকমে বাঁশের মাচা বেঁধে ছোটো ছোটো ঘর বানিয়ে থাকেন গ্রামবাসীরা।
সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েন গ্রামের কোনো মানুষ মারা গেলে। ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী মৃতদেহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফন করা উচিৎ। অথচ সেই সময় যদি জোয়ার আসে, তাহলে কোনোভাবেই দাফন করা সম্ভব নয়। ভাঁটার সময় জল নেমে গেলে দাফন করা হয়। কিন্তু তাও খুব একটা সহজ পদ্ধতি নয়। জল আর কাদা দিয়ে তো দাফন করা চলে না। তার জন্য মাটি চাই। আর মাটি আনতে যেতে হয় প্রায় দেড় মাইল দূরের স্থলভাগে। তারপরেও মানুষ কোনোরকমে বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া উপায়ও যে নেই। সমুদ্রগর্ভের এই গ্রামে কেউ তো আর জমি কিনবে না। ফলে জমি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়ার উপায় নেই। তারপরেও জাকার্তা শহরে বা অন্য কোথাও কাজের সন্ধান পেলে চলে যাচ্ছেন অনেকে। বছর কুড়ি আগেও যেখানে ৪৭০ জন গ্রামবাসী বাস করতেন, সেখানে সংখ্যাটা এখন নেমে এসেছে ১৫০-এর আশেপাশে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সারা পৃথিবীতেই সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে। গড়ে প্রতি ৮ বছরে ১ ইঞ্চি করে বাড়ছে সমুদ্রের উচ্চতা। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলে সমুদ্রের উচ্চতা প্রায় প্রতি বছরে ৪ ইঞ্চি হারে বেড়ে চলেছে। আর তার ফলে প্রতি বছর কয়েক হাজার একর এলাকা চলে যাচ্ছে সমুদ্রের তলায়। কতদিন পালাবেন মানুষ? একদিন গোটা পৃথিবীটাই হয়তো এভাবে সমুদ্রের হাত থেকে পালাতে শুরু করবে। অন্তত এই সমস্যার সমাধানের রাস্তা এখনও কেউই জানেন না।
আরও পড়ুন
সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য কুমারীত্ব পরীক্ষা! ইন্দোনেশিয়ার ঘৃণ্য প্রথার ইতি
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পরিবেশ বাঁচাতে ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষকের হাতিয়ার শিশুরাই