নিশ্চিন্ত চাকরি ছেড়ে, প্রকাশনার জগতে এসে কামাল ‘আত্মজা’র অরুণাভ-র

গত এক দশকে বাংলা প্রকাশনায় উঠে এসেছে বেশ কিছু তরুণ মুখ। তাঁদের অধিকাংশই পত্রিকা থেকে ধীরে সরে এসেছেন প্রকাশনায়। এঁরা কেবল ব্যবসা করতে নয়, এক অসম্ভব ভালোবাসা এবং স্নেহের জায়গা থেকে এসেছেন এই প্রকাশনা জগতে। সকলেই চাকরি সামলে একটা বড়ো সময় দেন প্রকাশনার কাজে। এঁদের থেকে কিছু আলাদা গল্প অরুণাভ-র। আত্মজা প্রকাশনের অরুণাভর ব্যাকগ্রাউন্ড টেকনিকাল। তিনি আইটির ছেলে। টেক জায়েন্ট তিনটি কোম্পানিতে চাকরি করেছেন নানা সময়ে। বাংলার বাইরেই কাটিয়েছেন বেশিটা সময়। তারপর স্বাবলম্বী হয়ে ফিরে এসেছেন কলকাতায়। নিজের প্রকাশনা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

চাকরি ছেড়ে হোলটাইম প্রকাশনার জগতে চলে এসেছেন অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যে অন্য ধারার কাজে বেশ সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে 'আত্মজা'। বিচিত্র সব বিষয়ের বই! তবে সাহিত্যের সঙ্গে অরুণাভ-র যোগাযোগ আজকের নয়। আগেই বলেছি তিনি পত্রিকা করে পা দিয়েছেন এই জগতে। বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন। যুক্ত ছিলেন 'একক মাত্রা' পত্রিকার সঙ্গেও। একসময় এককমাত্রার সহ-সম্পাদনার কাজ করেছেন। তারপর কর্পোরেটের চাকরি ছেড়ে চলে এলেন প্রকাশনার জগতে। পুঁজি বলতে কয়েকজন বন্ধুবান্ধব যাঁরা নতুন ধরনের বই লিখতে চান। 'আত্মজা' শুরু থেকেই তাই গতানুগতিক বাজারচলতি বইয়ের বাইরে গিয়ে কাজ করেতে পেরেছে। নতুন করে কিছু হারাবার ছিল না অরুণাভ-র, অথচ জেতার জন্য ছিল এক দিগন্ত সম্ভাবনা। অরুণাভ জানালেন, প্রথম দিকে শুধু লোকায়ত সাহিত্য আর রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক কাজ করত আত্মজা। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে চর্চার আড়ালে থাকা একাধিক বিষয় তুলে এনেছেন তাঁরা।

মূলধন কম। তাই প্রথম থেকেই কঠিন হয়েছে যাত্রা। প্রথম বছর স্টল পাননি কলকাতা বইমেলায়। জীবনের প্রথম বড় মেলার স্মৃতি বলতে দিল্লির ওয়ার্ল্ড বুক ফেয়ার। সেখানে বিরাট কিছু আশা ছিল না তাঁর। অল্পই বই নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনদিনের মধ্যেই সব বই বিক্রি হয়ে গেল। "কোনো বড় নাম বা টাইটেল নেই, কিন্তু আত্মজার ভিন্ন স্বাদের বইগুলো পাঠকের দৃষ্টি টেনেছিল। সেই থেকেই ফ্লো-টা চলছে।"

বইয়ের বিপণনের ক্ষেত্রে অনলাইন বা ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলোকে গুরুত্ব দিতে আগ্রহী তিনি। তাঁর মতে "এটাই ভবিষ্যত"। প্রথম প্রথম প্রকাশনার জগতে এই নিয়ে বেশ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। "সেদিন যাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন, আজ তাঁরাই আবার সেদিকে ঝুঁকছেন।" অরুণাভ নিজের চেষ্টায় ইতিমধ্যেই এক বিরাট ক্রেতাকূল তৈরি করে ফেলেছেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।

কাগজে ছাপা বইয়ের পাশাপাশি বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বই প্রকাশের কাজ করে চলেছে আত্মজা। অরুণাভ মনে করেন, ছোট প্রকাশক যাদের কোনো ওয়াইড ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক নেই, বড় বড় দোকানে যাদের বই রাখে না, তাদের কাছে ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

তবে ই-কমার্সকে গুরুত্ব দিলেও তাকে বইমেলার পরিপূরক মানতে রাজি নন অরুণাভ। তিনি বলেন আরও বেশি জায়গায় বইমেলার প্রয়োজন রয়েছে। অনলাইন বিপণন সবসময় বই বিপণনের সাপোর্টিং ফ্যাক্টর হিসাবে থেকে যাবে। সারাবছর বইয়ের বাজার ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু পাঠকের সঙ্গে প্রকাশকের যোগাযোগের জায়গাটা বইমেলাতেই তৈরি হতে থাকবে। নতুন বই তৈরির কাজে এই যোগাযোগটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

অরুণাভ তাঁর পাঠককূলকে অনেকখানিই খুঁজে পেয়েছেন, কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন বুকঠুকে। তবে আগামীতে ই-কমার্সের দিকে মানুষ বেশি ঝুঁকলেও বইমেলার বিষয়টা নিয়ে আশাবাদী অরুণাভ। তিনি চান বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে আরও আরও টেকনোলজিকে কাজে লাগানো হোক নানাক্ষেত্রে।

Latest News See More