বরফ-পাহাড়ে নৃত্যানুষ্ঠান, পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ সিডনিতে

যদিও সিডনি শহরে এখন ঘোর গ্রীষ্মকাল, তবে তার মধ্যেই দাঁড়িয়ে রয়েছে আস্ত একটি বরফের পাহাড়। উচ্চতা প্রায় ২০ মিটার। আর সেই ছোট্ট পাহাড়ের উপরেই নৃত্যের তাল তুলছেন একদল শিল্পী। ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে একটানা নৃত্য পরিবেশন করেছেন শিল্পীরা। ২০২২ সিডনি ফেস্টিভ্যালে (Sydney Festival) দেখা গেল এমনই দৃশ্য। কিন্তু কেন এমন অভিনব মঞ্চ বেছে নিলেন তাঁরা? উদ্দেশ্যটা খুব অভিনব নয়। পরিবেশ দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নানা ধরনের প্রচারই চলছে সারা পৃথিবী জুড়ে। তারই অংশ হিসাবে এই উদ্যোগ নিয়েছেন থিয়েটার কোম্পানি ‘লেগস অন দ্য ওয়াল’-এর (Legs On The Wall) সদস্যরা।

২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে ভয়ঙ্কর দাবানল আজও মানুষের স্মৃতিতে থেকে গিয়েছে। ২০২১ সালেও সেই আগুন নেভেনি। আজও সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার বহু মানুষ আশ্রয়হীন। এমন একটা সময়ে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে অন্যতম আলোচিত বিষয় পরিবেশ দূষণ। কারণ পরিবেশ দূষণই যে এই অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণ, তাতে সন্দেহ নেই। আর দূষণ রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও বাড়বে। শুধু অস্ট্রেলিয়াই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আজ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। মেরু অঞ্চলের বরফও গলে যাচ্ছে ক্রমশ।

দলের প্রধান জসুয়া টমসন অবশ্য বলছেন, মেরু অঞ্চলের বরফের কথা বোঝাতে নয়, বরং আগুনের বিপরীত হিসাবেই মাথায় এসেছিল বরফের কথা। তবে যে কোনো শিল্প উদ্যোগের অর্থ নিজের মতো করে বুঝে নেওয়ার অধিকার সবারই রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে সমগ্র অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা। প্রায় আড়াই টন ওজনের বরফের স্তূপ জমিয়ে রাখা সহজ বিষয় নয়। তা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবহণ করাও বেশ কঠিন। এই বরফ জমাতেই এমন এক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যার দাম ৩০ হাজার ডলার।

ইতিমধ্যে এই অনুষ্ঠান বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে। সিডনি ফেস্টিভ্যালে বহু মানুষ তো উপস্থিত থেকেছেনই, সেইসঙ্গে সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে এই অনুষ্ঠানের ভিডিও। সেখানেও বহু মানুষ প্রশংসা জানিয়েছেন। তবে বিরূপ সমালোচনাও কম হয়নি। অনেকেই বলছেন, পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে গিয়ে এমন আয়োজন করলেন, যাতে বরফ জমাতেই কত পেট্রলের খরচ হয়েছে তার হিসাব পাওয়া কঠিন। আবার কারোর কথায়, গ্রীষ্মকালে সিডনি শহরে বরফ গলে যাবে, এতে আশ্চর্যের কিছু তো নেই। তাই এই অনুষ্ঠান দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের তাৎপর্য বোঝানোও সম্ভব নয়। তবে বিতর্ক সত্ত্বেও একথা অনস্বীকার্য, পরিবেশ নিয়ে প্রচার ক্রমশ বাড়ছে। এই প্রচারকে সঙ্গী করেই প্রকৃত সচেতনতা গড়ে তোলার কাজটাও ভীষণ জরুরি।

আরও পড়ুন
৩০ বছরে বিলুপ্তপ্রায় প্রবাল উপকূল, দায়ী উষ্ণায়ন

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
উষ্ণায়নই শত্রু, বিলুপ্তির পথে সমুদ্র-শৈবাল?