সাদা হ্যান্ডমেন্ড কাগজের ওপর ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য বৃত্তাকার দাগ। প্রতিটির আয়তন সমান। তবে রং ভিন্ন। এই অতিসাধারণ কাগজেরই মূল্য ২০০০ ডলার। বা, আরও ভালো করে বলতে গেলে এই প্রতিটি কাগজের টুকরোই অর্থ বা কারেন্সি। কিন্তু কোথায় চলে এমন বিচিত্র নোট?
না, কোনো দেশের সরকারের অনুমোদিত অর্থ নয় এটি। এই কারেন্সির জনক ব্রিটিশ চিত্রশিল্পী ডামিয়েন হার্স্ট (Damien Hirst)। ২০১৬ সালে এই ধরনের মোট ১০ হাজারটি ছবি তৈরি করেছিলেন ডামিয়েন। আর এই সিরিজটির নামকরণ করেছিলেন ‘দ্য কারেন্সি’ নামে। হ্যাঁ, আমরা যে মুদ্রা ব্যবহার করে থাকি, তা তো সাধারণ কাগজই। শুধু ছাপার ধরন এবং কোনো প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ব্যাঙ্কের সচিবের স্বাক্ষরই তাকে অর্থবহ করে তোলে। তবে শিল্পের ক্ষেত্রেই বা হবে না কেন তেমনটা? যদি শিল্পীরাও এমন মুদ্রা তৈরি করতে পারে?
হাতে তৈরি টাকার এই চিন্তা-ভাবনা থেকেই ‘দ্য কারেন্সি’-খ্যাত অভিনব সিরিজটি আঁকার কাজ শুরু করেন ডামিয়েন। দীর্ঘ ২ বছরের প্রচেষ্টায় তৈরি করেছিলেন একই ধরনের ১০ হাজার ‘নোট’। কোনো ব্যাঙ্কের শিল নয়, বরং নিজের স্বাক্ষরেই তাদের ‘অর্থবহ’ করে তুলেছিলেন তিনি। সঙ্গে প্রতিটি চিত্রকলাতেই সংযোজন করেছিলেন একটি করে বিশেষ চিপ। কাগজের তৈরি এই চিপও নিজের হাতেই বানিয়েছিলেন তিনি। তবে প্রত্যেকটি ছবির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল পৃথক পৃথক নকশার চিপ।
এক-কথায় চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছিল ডামিয়েনের এই প্রকল্প। বিক্রি হয়েছিল প্রায় সমস্ত ছবিই। তবে এখানেই গল্পের শেষ নয়। আজ প্রযুক্তির দুনিয়ায় দাঁড়িয়ে ডিজিটাল অর্থের সঙ্গে সকলেই পরিচিত আমরা। ব্যাঙ্কে মুদ্রা বা মুদ্রিত নোট জমা দিলেই তা ডিজিটাল কারেন্সি হিসাবে জমা হয় ডিজিটাল ওয়ালেটে। তাছাড়া বর্তমানে বাজার জুড়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির দৌরাত্ম্যও চোখে পড়ার মতোই। তাও তো কিনতে হয় অর্থের বিনিময়েই। এমনটা যদি নিজের আঁকা ছবির সঙ্গেও হয়?
বছর খানেক আগেই এই চিন্তা ভাবিয়ে তুলেছিল ডামিয়েনকে। ‘দ্য কারেন্সি’ সিরিজের প্রতিটি ছবিই স্ক্যান করে নিজের সংরক্ষণে রেখেছিলেন ডামিয়েন। সেগুলিকেই এবার এনএফটি বা নন-ফাঞ্জিবল টোকেন হিসাবে ব্যবহার করবেন তিনি। ‘দ্য কারেন্সি’-র ক্রেতারা আসল ছবিটি শিল্পীর কাছে জমা দিলেই তাঁরা পেয়ে যাবেন ডিজিটাল স্ক্যান। ২০২১ সালে তাঁর এই ঘোষণার পর, ৪৭৫১ জন গ্রাহক সাড়া দিয়েছিল তাঁর ডাকে।
আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে লন্ডনের নিউপোর্ট স্ট্রিট গ্যালারিতে আয়োজিত হতে চলেছে এক বিশেষ প্রদর্শনী। ক্রেতাদের থেকে সংগৃহীত ‘দ্য কারেন্সি’-র আসল কপিগুলিই প্রদর্শিত হবে এই প্রদর্শনীতে। এক মাস ব্যাপী এই প্রদর্শনীর শেষে গ্যালারিরই মধ্যেই সাড়ে চার সহস্রাধিক ছবিকে জ্বালিয়ে দেবেন শিল্পী নিজেই। অবশ্য কেউ চাইলে তার আগেই পুনরায় এনএফটি জমা দিয়ে আসল চিত্রকলাটি সংগ্রহ করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু ডামিয়েনের এমন আশ্চর্য সিন্ধান্তের কারণ কী? তাঁর কথায়, লিকুইডিটি রেসিও নিয়ন্ত্রণ করা যে-কোনো প্রতিষ্ঠানেরই কর্তব্য! এমন খামখেয়ালিপনা শিল্পীদেরই হয়তো মানায়…
Powered by Froala Editor