জেলখানার দেয়াল বেয়ে নেমে আসছেন এক বন্দি। বিছানার চাদর পাকিয়ে দড়ির মতো ঝুলিয়ে দিয়েছেন। আর তার নিচে ঝুলছে একটি টাইপরাইটার মেশিন। ইংল্যান্ডের রিডিং জেলখানার দেয়ালে সম্প্রতি দেখা গিয়েছে এমনই একটি গ্রাফিটি। আর ছবির ধরন দেখেই বোঝা যায়, এই ছবির স্রষ্টা খোদ ‘ব্যাংকসি’ (Banksy)। গ্রাফিটির মতো বে-আইনি শিল্পকেও যিনি সারা পৃথিবীজুড়ে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। তবে এই ছবি নিছক আরেকটি গ্রাফিটি নয়। এর সঙ্গে রয়েছে রিডিং জেলখানা বা রিডিং গাওলকে বিক্রি হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর প্রচেষ্টাও। নগর কর্তৃপক্ষ এবং ইংল্যান্ডের বিচার বিষয়ক মন্ত্রালয়কে সম্প্রতি এমনই প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যাংকসি।
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় শ্রেণির ঐতিহ্যশালী অট্টালিকাগুলির একটি রিডিং গাওল। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের আন্দোলনের তীর্থক্ষেত্র মনে করা হয় এই জেলখানাকে। কারণ ১৮৯৫ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত এখানেই কাটিয়েছিলেন স্বয়ং অস্কার ওয়াইল্ড। লর্ড অ্যালফ্রেড ডগলাসের সঙ্গে তাঁর সমকামী সম্পর্কের কথা জানা যেতেই বন্দি করা হয়েছিল তাঁকে। আর এই জেলখানায় বসেই ওয়াইল্ড লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত ‘ব্যালাড অফ রিডিং গাওল’। তবে বন্দি সুরক্ষা আইনের আধুনিক মডেলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আর এই প্রাচীন অট্টালিকা ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তাই ২০১৩ সাল থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রিডিং গাওল। মূলত সেই কারণেই জেলখানাটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে শুরু হয় নিলামের প্রক্রিয়াও।
এর মধ্যে রিডিং গাওলকে বাঁচাতে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন ইংল্যান্ডের বহু নাগরিক। স্যার কেনেথ ব্রানা, কেট উইনসলেটের মতো হলিউড তারকারাও সেই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আর এর মধ্যেই গত মার্চ মাসে নিলামের প্রথম তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, সর্বোচ্চ ২.৬ মিলিয়ন ইউরোতে বিক্রি করা সম্ভব জেলখানাটি। ইংল্যান্ডের বিচার বিভাগের মতে এই মূল্য যথেষ্ট নয়। আর এর মধ্যেই হঠাৎ দেখা যায়, জেলখানার দেয়ালে একটি ছবি এঁকেছেন ব্যাংকসি। ছবিতে বন্দি মানুষটির মুখও যেন অনেকটা অস্কার ওয়াইল্ডের মতোই। তবে পোশাক একেবারেই আধুনিক। যেন ওয়াইল্ডের আধুনিক সংস্করণ তিনি। ব্যাংকসি প্রস্তাব দিয়েছেন, ইংল্যান্ডের বিচার বিভাগের কাছ থেকে তিনি নিজে জেলখানাটি কিনে নিতে রাজি। এই ছবি বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে, তার পুরোটা দিয়েই তিনি জেলখানাটি কিনতে চান। আর বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ছবির দাম অন্তত ১০ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত উঠবে। যা নিলামের মূল্যের চেয়ে অনেকটাই বেশি।
কোনো প্রোমোটারের হাতে জেলখানা বিক্রি হয়ে গেলে তিনি সেখানে বহুতল অট্টালিকা বানাবেন, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু ব্যাংকসি চান, অট্টালিকাটি অক্ষত রেখে সেখানে একটি শিল্পক্ষেত্র গড়ে তুলতে। পাশাপাশি, তিনি নিজেও এমন একটি শিল্পধারার সঙ্গে যুক্ত, জেলখানা যেখানে শিল্পীদের নিশ্চিত ঠিকানা। ব্যাংকসি আইনের ফাঁক দিয়ে বহুবার বেরিয়ে যেতে পেরেছেন, এখন তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবও অনেক বেশি। কিন্তু ইংল্যান্ডের আইনে গ্রাফিটি আজও বে-আইনি। জেলখানার মধ্যেই সেই বে-আইনি শিল্পের পীঠস্থান গড়ে উঠুক, এমনটাই চান ব্যাংকসি। তাঁর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন খোদ রিডিং অঞ্চলের এমপিও। তবে সরকার শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করেন কিনা, সেটাই দেখার।
আরও পড়ুন
শিল্পীদের তুলিতে পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রদর্শনী মার্কিন রেস্তোরাঁয়
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শিল্পী হরেন দাসের আঁকা ছবির প্রদর্শনী দক্ষিণ কলকাতায়