দিনটা ছিল ২৫ নভেম্বর, ২০২০। ভারতে তখন বেশ রাত। আকস্মিক খবর এসেছিল তিনি আর নেই। দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা (Maradona)। মাত্র ৬০ বছর বয়সে, গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র। তারপর পেরিয়ে গেছে প্রায় দেড় বছর। তবে এখনও তরতাজা সেই স্মৃতি, ক্ষতদাগ। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেই আয়োজিত হয়ে চলেছে নানা অনুষ্ঠান, নেওয়া হচ্ছে একাধিক উদ্যোগ। এবার পৃথিবী নয়, কিংবদন্তি ফুটবলারকে শ্রদ্ধা জানানো হবে মহাকাশেও।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন মহাকাশে। সম্প্রতি এমনই অভিনব উদ্যোগ নিল আর্জেন্টিনার বেসরকারি ফিনটেক সংস্থা ‘গিভ অ্যান্ড গেট’। কয়েকদিনের মধ্যেই মহাকাশে বিশেষ স্যাটেলাইট (Satellite) অর্থাৎ কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে চলেছে আর্জেন্টাইন সংস্থাটি। আর সেই স্যাটেলাইটেই রাখা থাকবে মারাদোনার ব্যবহৃত বুট জুতো ও আরও কিছু সামগ্রী।
এর আগে মারাদোনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন জায়াগায় তৈরি হয়েছে ইউজিয়াম, প্রকাশিত হয়েছে ডাকটিকিট, এমনকি দেশের সর্বোচ্চ নোটে মারাদানোর ছবি ছেপেছে আর্জেন্টিনার সরকার। তবে এ-হেন শ্রদ্ধার্ঘ্য মারাদোনা কেন, বিশ্বের কোনো ফুটবলারই পাননি এর আগে। উৎক্ষেপিত হতে চলে কৃত্রিম উপগ্রহটির নামকরণও করা হয়েছে মারাদোনার নামে। ১৯৮৬ সালের ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ ফাইনাল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে ঐতিহাসিক দুটি গোল করে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের স্বাদ এনে দিয়েছিলেন মারাদোনা। এই ম্যাচের পরেই তাঁর নামের পাশে জুড়েছিল ‘কসমিক কাইট’-এর তকমা। এই খেতাবের নেপথ্যে ছিলেন এক উরুগুয়ের সাংবাদিক। হ্যাঁ, কৃত্রিম উপগ্রহের নাম হিসাবে এই নামটিকেই বেছে নিয়েছে ফিনটেক সংস্থাটি।
তবে শুধু মারাদোনের ব্যবহৃত সামগ্রীই নয়, বিগত দেড় বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মারাদোনা-অনুরাগীদের থেকে শোকবার্তা সংগ্রহ করেছে আর্জেন্টিনার ফিনটেক সংস্থাটি। ভিডিও ও অডিও ফর্ম্যাটে সেইসব শোকবার্তা হার্ড ড্রাইভে বন্দি করে পাঠানো হবে মহাকাশে। তাছাড়াও থাকবে মারাদোনার কিছু সেরা গোলের ভিডিও।
মৃত্যুতেই কি সব শেষ? পৃথিবীর নানান সংস্কৃতিতে বিশ্বাস, মৃত্যুর পরেও রয়েছে এক অন্য জীবন। শুধু মৃত্যুর পর নশ্বর দেহ ছেড়ে মানুষের আত্মা বিলীন হয়ে যায় মহাশূন্যে। তবে কি মহাশূন্যেই বিরাজ করছেন ফুটবল রাজপুত্র? মানুষের সেই বিশ্বাস যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে ‘কসমিক কাইট’ তাঁর কাছে নিশ্চয়ই পৌঁছে দেবে এই গ্রহের মানুষের বার্তা…
Powered by Froala Editor