পরিবেশের বিপন্নতা নিয়ে সাম্প্রতিককালে সরগরম গোটা পৃথিবীই। তার ওপর প্রকৃতি ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যের অভাবের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে অজস্র প্রজাতির জীবজন্তু। অন্তত কিছু প্রজাতিকেও যদি বাঁচানো যায়, বজায় থাকবে জীববৈচিত্র্য। জলজ প্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থা ভারতে এতদিন ছিল দুর্লভ। সম্প্রতি, সিন্ধু উপত্যকার বিয়াস নদীতে তৈরি করা হয়েছে ১৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জলজ প্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প। দেশের প্রথম।
সিন্ধু নদ ও তার সঙ্গে যুক্ত নদীগুলিকে ঘিরে ছিল এক বিরল বাস্তুতন্ত্র। যদিও, নদীতে বাঁধ দেওয়ার ফলে তার অনেকগুলিই আজ বিপন্ন। হারিয়ে গেছে উভচর সরীসৃপ শ্রেণীর প্রাণী ঘড়িয়াল। সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলের বিখ্যাত ডলফিনও বিলুপ্তির পথে। দীর্ঘদিন ধরেই পরিবেশবিদরা এদের সংরক্ষণের কথা বলে আসছেন। অবশেষে, নেওয়া হল সেই উদ্যোগ।
আরও পড়ুন
রং-তুলির সাহায্যে ক্যানভাস হয়ে উঠল গোটা গ্রাম, বাংলার ‘খোয়াব গাঁ’-এর গল্প
২০১৭ সাল পর্যন্ত, দেশের কোনো নদীতে প্রাণী সংরক্ষণের জন্য আইনি ব্যবস্থা ছিল না। ২০১৭ সালে বিয়াস নদীতেই প্রথম বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন লাগু করা হয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল ভূলান অর্থাৎ ডলফিন সংরক্ষণ। সেইসঙ্গে হারিয়ে যাওয়া ঘড়িয়াল পুনর্বাসনের চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। নদীতে এখন মাছ ধরার ব্যাপারে বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যাতে বিপন্ন প্রাণীরা কিছুতেই সমস্যায় না পড়ে। বর্তমানে বিয়াস নদীতে প্রায় ১০টি ডলফিন আছে। এই বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির পাখি ও ৯০টিরও বেশি মাছের প্রজাতি।
ডলফিনের সংখ্যা বাড়লে তারা নদীর স্রোত ধরে পাকিস্তানের দিকে চলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কোনো নদীবাঁধ যেন তাদের রাস্তা না আটকায়, সেদিকেও নজর রাখা হবে বলে জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ দপ্তরের আধিকারিক কুলদীপ কুমার। পাকিস্তানে এখনও জলজ প্রাণী সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এই উদ্যোগ সফল হলে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রেরও উপকার হবে অনেকটাই।
দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশের অনেক ক্ষতি করেছে মানুষ। মানুষেরই দায়িত্ব সেসবের প্রতিকার করা। প্রকৃতি পরিবেশকে বাঁচাতে এরকম উদ্যোগ আরো নেওয়া উচিৎ, এবং শীঘ্রই।