ক্রমাগত পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়িয়ে চলেছে গ্রিন-হাউস গ্যাসগুলি। আর তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে মেরু অঞ্চলে। বিগত ৩ দশক ধরেই এই নিয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানীরা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। উত্তর মেরু অঞ্চলের বরফ গলনের যে হার বিজ্ঞানীরা আন্দাজ করেছিলেন, বাস্তব হার তার প্রায় দ্বিগুণ। এমনকি, এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে উত্তর-মেরু সাগরের উপর বরফের কোনো আস্তরণ থাকবেই না।
লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যাপক রবি ম্যালেট তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে নেমেছিলেন এই গবেষণায়। এতদিন উত্তর মেরু অঞ্চলে বরফ গলনের হার পরীক্ষা করার জন্য নির্ভর করা হত মূলত রুশ অভিযাত্রীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার উপরেই। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক তথ্যই জানা যায় না। ম্যালেট তাই ভরসা রেখেছেন স্যাটেলাইট প্রেরিত ছবির উপর। আর নিজস্ব কম্পিউটার মডিউলেশনের সাহায্যে বিশ্লেষণ করেছেন সমস্ত ছবি। আর তাতেই ধরা পড়েছে প্রকৃত চেহারা। দেখা গিয়েছে, উত্তর মেরুর খুব সামান্য অংশ বাদ দিলে কোথাও আর বরফের উপর তুষারের স্তর জমা হয় না। আর কঠিন বরফের স্তরও ক্রমশ পাতলা হয়ে আসছে। বহু জায়গায় উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ। এখনই তার সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান প্রকাশ না পেলেও ম্যালেট জানিয়েছেন এই পরিমাণ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কার চেয়ে অনেকটাই বেশি।
উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু পৃথিবীর উষ্ণতা নিয়ামক নামে পরিচিত। তার কারণ এই দুই অংশে বরফের স্তর। সূর্যের রশ্মি সরাসরি সমুদ্রের জলকে উত্তপ্ত তো করতে পারে না, বরং বরফে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায় মহাশূন্যে। এই বরফের স্তর হারিয়ে গেলে সারা পৃথিবীর উষ্ণতাই বাড়তে থাকবে। আর মেরু অঞ্চলের এস্কিমোদের মতো উপজাতিরা তো সমস্যায় পড়বেনই। তবে এর মধ্যে আরও বেশি আশঙ্কার কারণ এই যে, বরফ গলনের ফলে দুদিক থেকে খুলে যেতে চলেছে বাণিজ্যিক উপযোগিতা। একদিকে অতি সহজে চিন থেকে আমেরিকায় পৌঁছে যাবে মালবাহী জাহাজ। আবার খনিজ তেল ও গ্যাসেরও এক বিরাট ভাণ্ডার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। বাণিজ্যিক মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা এই পথ নিলে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে মেরুস্বাস্থ্য। তাই সব মিলিয়ে পরিস্থিতি প্রচণ্ড উদ্বেগজনক। যা করতে হবে তা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই, এমনটাই মনে করছেন ম্যালেট।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর গলিয়ে দিচ্ছে আণুবীক্ষণিক জীব, চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট