সিন্ধু সভ্যতার ‘অনালোচিত’ শহর রাখিগড়িতে শুরু হচ্ছে খননকার্য

গতবছরই সিন্ধু সভ্যতার (Indus Valley Civilization) ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া গিয়েছিল সেই সময়ের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের নমুনা। সিন্ধু সভ্যতা বলতেই আজও আমাদের মনে আসে হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদাড়ো শহরের নাম। তবে তার বিস্তার এতটুকু ছিল না। পূর্ববর্তী গবেষণার নমুনাগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল বর্তমান হরিয়ানার হিসার জেলার রাখিগড়ি (Rakhigarhi) প্রত্নক্ষেত্র থেকে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, এখানে আরও নানা অবাক করা নিদর্শন পাওয়া সম্ভব। শুধু তার জন্য যথাযথ খননকার্য চালাতে হবে। প্রায় ৩ বছর খননকার্য বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হতে চলেছে সেই কাজ। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থার (ASI) কর্তারা। ইতিমধ্যে গত সপ্তাহে তাঁরা হিসার জেলা ঘুরেও এসেছেন।

এখনও পর্যন্ত সিন্ধু সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন নগরের যে নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে তা মোটামুটি ৫২০০ বছরের পুরনো। তবে রাখিগড়ি প্রত্নক্ষেত্রের বয়স তার থেকেও বেশ কিছুটা প্রাচীন। এখানে মানুষের বসবাসের প্রমাণ হিসাবে ৯টি জায়গা চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। এর মধ্যে ২ নম্বর ও ৬ নম্বর ক্ষেত্রের নমুনার কার্বন-ডেটিং করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে নমুনাগুলির বয়স যথাক্রমে ৫৬৪০ বছর এবং ৫৪৪০ বছর। অনেকের অনুমান সিন্ধু সভ্যতার গোড়াপত্তনের ইতিহাসও জানা সম্ভব রাখিগড়ি প্রত্নক্ষেত্র থেকে।

৯টি প্রত্নক্ষেত্রের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৬টি ক্ষেত্রে প্রাথমিক খননকার্য চালানো হয়েছে। তার মধ্যে ৫টি জায়গায় মানুষের বসবাসের নমুনা মিলেছে। আর অন্যটি সমাধিক্ষেত্র। এই সমাধিক্ষেত্র থেকে ইতিমধ্যে ৪টি নরকঙ্কালও উদ্ধার করা হয়েছে। এই প্রথম গবেষণাযোগ্য অবস্থায় সিন্ধু সভ্যতার নরকঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে। ফলে নৃতাত্ত্বিক দিক থেকেও তার গুরুত্ব অনেক।

১৯৯৭-২০০০ সালের মধ্যে এএসআই-এর তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক অমরেন্দ্র নাথের উদ্যোগে প্রথম রাখিগড়িতে খননকার্য শুরু হয়। তাঁর রিপোর্টেই উল্লেখ করা হয়েছিল, সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন এমন সুরক্ষিত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া সত্যিই আশ্চর্যের। এরপর দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থাতেই পড়ে ছিল এলাকাটি। ২০১৫ সালে অধ্যাপক বসন্ত সিন্ধের নেতৃত্বে নতুন করে শুরু হয় খননকার্য। এই সময়েই সবচেয়ে বেশি নমুনা উদ্ধার হয়েছে। তবে ২০১৮ সাল থেকে আবার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ সালে কাজ শুরু হওয়ার কথা হলেও কোভিড পরিস্থিতিতে কাজ শুরু করা যায়নি। তবে এবার খুব তাড়াতাড়ি নতুন করে কাজ শুরু হবে বলেই জানিয়েছে এএসআই। আর এবারেও নেতৃত্ব দেবেন অধ্যাপক সিন্ধে। সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন নাগরিক সভ্যতা এই সিন্ধু সভ্যতা। তার ইতিহাস এবার আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠা শুধু সময়ের অপেক্ষা।

আরও পড়ুন
সিন্ধু সভ্যতায় দ্রাবিড় গোষ্ঠীর ভাষা-ব্যবহার, হদিশ দিলেন বাঙালি গবেষক

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অবশেষে প্রত্যাশপূরণ, অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয় পি ভি সিন্ধুর

Latest News See More