ছবি দেখে মনে হয় ঠিক যেন মহাজাগতিক কোনো রশ্মির বিকিরণ। তবে আসলে এটি একটি মানচিত্র। আমাজনের জঙ্গলের মধ্যে এতদিন লুকিয়ে থাকা অসংখ্য প্রাচীন স্তূপাকৃতি গ্রামের একটি মানচিত্র। সম্প্রতি সেই মানচিত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন ইন আর্কিওলজি’ পত্রিকায়। এমন একটা আবিষ্কারে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
আমাজনের দক্ষিণ-পশ্চিমের ইতিহাস সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় না। তবে ইউরোপীয়দের আগমণের অনেক আগে সেখানে বেশ উন্নত একটি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বলেই ধারণা করেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। আর সেই সভ্যতায় মানুষ কারিগরিবিদ্যায়, বিশেষত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিল। সম্প্রতি তারই প্রমাণ পাওয়া গেল উল্লেখিত মানচিত্রে। জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা গ্রামের ধ্বংসাবশেষের ছবি পেতে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে লেজার টেকনোলজি। হেলিকপ্টার থেকে লেজার রশ্মির মাধ্যমে স্ক্যান করা হয়েছে আমাজনের জঙ্গল। আর তার সঙ্গে পুরনো কিছু মানচিত্র মিলিয়ে নতুন করে আঁকা হয়েছে একটি ছবি।
ছবিতে দেখা গিয়েছে, ব্রাজিলের দক্ষিণ-পশ্চিমে সর্বমোট ৫১টি স্তূপাকৃতি গ্রাম রয়েছে। তার মধ্যে ২৫টি বৃত্তাকার এবং ১১টি আয়তাকার। বাকি ১৫টি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তাদের আসল চেহারা অনুমান করা কঠিন। বৃত্তাকার গ্রামগুলির ব্যাস গড়ে ৮৬ মিটার। আয়তাকার গ্রামগুলিও প্রায় একই আয়তনের। এদের একেকটি বাহুর গড় দৈর্ঘ ৪৫ মিটার। মোটামুটি ৪-৫ কিলোমিটার দূরত্বে গ্রামগুলি প্রায় একসঙ্গেই তৈরি হয়েছিল বলে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সঠিক সময়কাল জানা না গেলেও মোটামুটি তৃতীয় থেকে সপ্তম শতক পর্যন্ত এখানে মানুষের বসবাস ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে।
গ্রামগুলির নির্মাণ কৌশল অবাক করেছে প্রত্নতাত্ত্বিকদের। প্রতিটি গ্রামের ঠিক কেন্দ্রে একটি করে সূর্যঘড়ি এমনভাবে বসানো যে গ্রামবাসীরা সারাদিন সময় বুঝতে পারতেন। পাশাপাশি গ্রামগুলি স্তূপাকৃতি হওয়ায় স্বল্প পরিসরেই অনেক মানুষের বসবাস সম্ভব হয়েছিল। প্রতিটি গ্রামকে আবার যুক্ত করে রেখেছিল প্রাচীন সড়কপথ। সেখানে বন্য প্রাণীদের আক্রমণ রুখতে অদ্ভুত ধরণের সুরঙ্গের মতো কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল। যদিও কৃষিকাজের কোনো নমুনা এখনও পাওয়া যায়নি, তবে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার যে পরিচয় পাওয়া গিয়েছে তাতে এই হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা যে বেশ উন্নত ছিল, তাতে সন্দেহ নেই।
Powered by Froala Editor