মানবসভ্যতার ইতিহাস বহু প্রাচীন। কতকাল আগে থেকেই চলত রাজায় রাজায় যুদ্ধ। সেসবের লিখিত নথি আর কতটুকুই বা আছে? এখানে ওখানে ছড়ানো ছিটানো চিহ্ন যতটুকু পাওয়া যায় তাই সম্বল ইতিহাসের। এখনও মাটির নিচ থেকে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া যায় ইতিহাসের নানান চিহ্ন।
মধ্যপ্রাচ্যে মানুষের বসবাস প্রায় তিন হাজার বছরের বেশি। তখন থেকেই বহু ছোটো-বড়ো রাজ্য গড়ে উঠেছে এই অঞ্চলে। সম্প্রতি তেমনই একটি হারিয়ে যাওয়া রাজ্যের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। রাজ্যটির সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ থেকে ৬০০ অব্দ বলেই অনুমান। অর্থাৎ ব্রোঞ্জ যুগ ও লৌহ যুগের একটি রাজ্য। এখনও পর্যন্ত রাজ্যটির কোনো নাম জানা না গেলেও, বেশ বড়ো রাজত্ব ছিল বলেই অনুমান গবেষকদের।
আরও পড়ুন
পুকুরের পাশে পড়ে রয়েছে দশম শতাব্দীর ইতিহাস, প্রাচীন শিলালিপি উদ্ধার
দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা করে আসছে ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউট। বিশ্বের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের গবেষকদের হাতেই এসে পৌঁছেছে একটি শিলালিপি। দক্ষিণ তুর্কি প্রদেশের তুর্কমেন-কারাহাইক অঞ্চলের স্থানীয় কৃষকরা সেচের জন্য খাল খনন করতে গিয়ে এই শিলালিপি দেখতে পান। আর তারপরেই খবর দেন ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের গবেষকদের। প্রাচীন হায়ারোগ্লিফিক লিপির এই শিলাখণ্ডটি হাতে পেয়ে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত প্রত্নতাত্ত্বিকরা। লিখিত লিপির পাঠোদ্ধার করে চমকে গেছেন তাঁরা।
শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এটাকে একটি রাজনথি বলেই মনে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন ফ্রিজিয়া রাজ্যের রাজা মিদাসকে যুদ্ধে পরাজিত করেছিল প্রাচীন এই রাজ্যের সেনাবাহিনী। সেই যুদ্ধজয়ের কথাই লেখা আছে শিলালিপিতে। শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য তথ্য থেকে গবেষকরা জানাচ্ছেন জনপদটির আয়তন ছিল প্রায় ৩০০ একর। হতে পারে, এটাই সেসময়ের মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় জনপদ। আর তুর্কমেন-কারাহাইক অঞ্চল থেকেই রাজ্যপাট চলত বলেও অনুমান তাঁদের।
আরও পড়ুন
১,৫০০ বছর আগের সাবধানবাণী, শিলালিপিতে খোদাই করা পরিবেশ দূষণের কথা
তবে হারিয়ে যাওয়া এই রাজত্বের ইতিহাস জানতে আরো বিশদ তথ্যপ্রমাণ দরকার। আর তার জন্য আশেপাশের অঞ্চলে আরো খননকার্য চালাতে হবে বলেই জানাচ্ছেন ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের গবেষক প্রফেসর জেমস অসবর্ন। এখন অপেক্ষা, নতুন ইতিহাসের। কে জানে, অজানা কোনো অধ্যায় হয়তো অপেক্ষা করে রয়েছে আমাদের জন্য!