একদিকে যেমন মানুষের হাতে এসেছে প্রযুক্তি, তেমনই সরবরাহ বেড়েছে কাঁচামালের। ফলে বাড়ি কিংবা অন্যান্য যে কোনো নির্মাণের সময়ই নজর দেওয়া হয় ভূমিকম্প প্রতিরোধের বিষয়ে। কিন্তু আজ থেকে কয়েক দশক আগেও ছবিটা এমন ছিল কি? সাধারণ ইটের গাঁথনিতে প্রায়ই ফাটল ধরিয়ে দিত ভূমিকম্প। তবে অবাক করার বিষয়, প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ভারতেই প্রচলিত ছিল ভূমিকম্প-প্রতিরোধক নির্মাণ কৌশল। সম্প্রতি এমন ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখে তাজ্জব প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
২০০৬ সালে সেপ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষকদল আহমেদাবাদের ঐতিহ্যবাহী পোল হাউস সাইটের বাড়িগুলির বিষয়ে প্রকাশ করেছিলেন একটি গবেষণাপত্র। আর সেখানে তাঁরা উল্লেখ করেন এক নির্মাণ কৌশল। ইটের গাঁথনির মধ্যেই দেওয়াল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে ছোটো ছোটো কাঠের টুকরো। যা স্থাপন করা হত জানলা-দরজার লিনটলের ওপরে এবং দুটি পৃথক সিলিংয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলে। কাঠের টুকরোগুলির দৈর্ঘ আনুমানিক ১২০ সেমি। প্রাথমিকভাবে তাঁরা মনে করেছিলেন ইটের বন্ধন সুদৃঢ় করতেই এমন ব্যবস্থা।
গুজরাটের ভাদনগরে ২০১৮ সাল নাগাদ শর্মিষ্ঠা হ্রদের পূর্ব তীরে বিশাল একটি প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল খনন করেন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার গবেষকরা। যা নির্মিত হয়েছিল আনুমানিক দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শতকে। এই বাড়িগুলির একইরকম গঠন দেখে বিজ্ঞানীরা তুলে আনেন এক নতুন তত্ত্ব। যা সত্যিই অবাক করার মতোই। দেওয়ালের ফাঁকে সেসময় কাঠগুলি ব্যবহৃত হত মূলত ভূমিকম্প প্রতিরোধের জন্যই। কারণ ইটের তুলনায় কাঠ তুলনামূলকভাবে নমনীয় হওয়ায় তার সংকোচন-প্রসারণ সম্ভব। আর কাঠের এই চরিত্রই দেওয়ালের ভেঙে পড়াকে আটকাতে সাহায্য করত বলে অভিমত গবেষকদের।
গুজরাট ভারতের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ রাজ্য। ২০০১ সালে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে প্রাণ গিয়েছিল ১৪ হাজার মানুষের। তার আগের ইতিহাসও একই কথা বলে। তবে দেড় হাজার বছর আগের এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে রীতিমতো চমকে গেছেন গবেষকরা। তবে ভাদনগরের পাওয়া স্থাপত্যগুলিতে কাঠের অবশিষ্টাংশ না পাওয়া গেলেও দেওয়ালের মাঝের ফাঁক পোল হাউস সাইটের বাড়িগুলির অনুরূপ। ফলে গবেষকদের এই তত্ত্বে খামতি নেই কোনোই। বিশেষজ্ঞদের মতে আনুমানিক ক্ষত্রপ এবং মৈত্রক যুগে নির্মিত হয়েছিল এই কাঠামোগুলি...
Powered by Froala Editor