হেরিটেজ তকমা পেল অপু-ত্রয়ীর ক্যামেরাম্যান সুব্রত মিত্রের বাড়ি

ঠিকানা ৭০, শরৎ বোস রোড। লাল ইটের পাঁজর বের করা বাড়িটার পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে হয়তো বিশ্বাস হবে না, এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে বাংলা সিনেমার বেড়ে ওঠার এক দীর্ঘ ইতিহাস। তবে সম্প্রতি তার দরজায় চোখে পড়বে এক সরকারি দারোয়ানকে। আর একটি নোটিশ। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কোনোভাবেই বাড়ির কোনো ক্ষতি বা মালিকানা বদল অথবা বন্দক রাখা যাবে না। হ্যাঁ, এই বাড়িটিকেই হেরিটেজ বিল্ডিং-এর স্বীকৃতি দিল রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। এখানেই তো আজন্ম শৈশব, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত কাটিয়েছেন সিনেমাটগ্রাফার সুব্রত মিত্র। যাঁর ক্যামেরায় ভর দিয়ে একের পর এক সিনেমা তৈরি করে গিয়েছেন সত্যজিৎ রায়।

সুব্রত মিত্রের বয়স তখন মাত্র ২১। ‘পথের পাঁচালি’-র কাহিনি নিয়ে সিনেমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন সত্যজিৎ রায়। নবীন পরিচালকের অর্থবল খুবই সামান্য। আর সুব্রত মিত্রও তো সিনেমায় কাজের সুযোগ খুঁজছেন। যদিও মুভি ক্যামেরা হাতে তুলে নেওয়ার অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। কেবল স্থিরচিত্র তোলার অভিজ্ঞতা নিয়েই শুরু হল প্রথম কাজ। আর তাতেই অবাক করে দিলেন সকলকে। সত্যজিৎ রায় নিজে বলেছিলেন, ক্যামেরার প্রতিটা ফ্রেমকে রাউল কাউটার্ডের চেয়েও ভালো চেনেন সুব্রত মিত্র। কাউটার্ড ততদিনে গোদারের সঙ্গে কাজ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছেন। আর কলকাতা শহরে বসে সুব্রত মিত্র আবিষ্কার করে ফেললেন এক নতুন প্রযুক্তি। ‘অপরাজিত’ সিনেমায় দর্শক প্রথম দেখলেন লাইট বাউন্সিং-এর কাজ।

সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে একের পর এক ‘পরশপাথর’, ‘জলসাঘর’, ‘দেবী’, ‘চারুলতা’ সিনেমায় যেমন কাজ করেছেন, তেমনই কাজ করেছেন জেমস আইভরির মতো পরিচালকের সঙ্গেও। আর এইসব ঐতিহাসিক কাজের স্মৃতিস্তূপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দীপ্রাচীন বাড়িটি। নানা সিনেমার ফিল্ম যেমন আছে, তেমনই আছে সত্যজিৎ রায়ের সিগারেট প্যাকেটে নিজের হাতে আঁকা নানা দৃশ্যের স্কেচ। সুব্রত মিত্রের কোনো সন্তান নেই। তাই আজ আর উত্তরাধিকার সূত্রে কেউ এই ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব পায়নি। তবে বাড়িটিকে ঘিরে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তার মধ্যে আছে সুব্রত মিত্র মেমোরিয়াল ট্রাস্টও। তবে মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতার জেরে ভাঙা পড়তে চলেছিল বাড়িটি। আর ঠিক তখনই হেরিটেজ কমিশনের কাছে বাড়িটি সংরক্ষণের আবেদন জানান সুব্রত মিত্রের পারিবারিক বন্ধু সুনন্দ বসু। আর সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে দ্রুত বাড়িটিকে হেরিটেজ বিল্ডিং হিসাবে ঘোষণা করল কমিশন। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে সত্যিই প্রয়োজনীয় চিল এই উদ্যোগ।

Powered by Froala Editor

More From Author See More